রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও রাজ্যের শাসক দলের সংঘাতকে ঘিরে মঙ্গলবার তৃণমূলের নজিরবিহীন বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল রাজ্যসভা ও রাজ্য বিধানসভা। দুই জায়গাতেই তৃণমূল সদস্যরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তাঁর অপসারণের দাবি তুললেন। রাজ্যপালের পদত্যাগ দাবি করে তৃণমূল সাংসদরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে স্মারকলিপি দিলেন। রাজ্যসভায় একের পর এক তৃণমূল সদস্যরা ধনকড়ের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে সরব হলেন। পরে তাঁরা ওয়াক আউট করে মিছিলে সামিল হন। তাঁদের মুখে স্লোগান ছিল, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে অবিলম্বে ফিরিয়ে নাও। রাজ্য বিধানসভাতেও একই দাবিতে শাসক দলের বিধায়করা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। পরে তাঁরাও দল বেঁধে বি আর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে জড়ো হন। সেখানে মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, তাপস রায়, শাসক দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ প্রমুখ রাজ্যপালের অপসারণ দাবি করেন। কিছুক্ষণ বাদে আরও অনেক বিধায়ক জড়ো হন সেখানে। বিধানসভায় রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে শাসক দলের সদস্যরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, এ ঘটনা যেমন বেনজির, তেমনি রাজ্যসভা কিংবা লোকসভায় রাজ্যের শাসক দলের সাংসদরা একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াক আউট করছেন, এমন নজিরও সম্ভবত নেই। প্রসঙ্গত, এর আগেও তৃণমূল সাংসদরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন।
বস্তুত, রাজভবনে আসার পর থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে শাসক দলের সংঘাত শুরু হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে পড়ুয়াদের হাত থেকে ঘেরাওমুক্ত করতে সটান সেখানে ছুটে যাওয়া থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় বৈঠক করা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়া, অধিবেশন স্থগিত থাকা সত্ত্বেও বিধানসভা ভবনে যাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে শাসক দলের তর্জা চলছিলই। সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণ হল, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এসসি, এসটি কমিশন সংক্রান্ত বিল সই না করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। সেই কারণে দু’দিন বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখেন অধ্যক্ষ। তার মধ্যেই একদিন রাজ্যপাল বিধানসভায় চলে যান। তাতে গোটা শাসক দলই ক্ষুব্ধ হয়। মন্ত্রীরা তাঁকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। রাজ্যপালও তার জবাব দেন। মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে বলেন, যিনি বিলে সই না করে আটকে রেখেছিলেন, তাঁর জন্যই বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয়, সেই তাঁকে দিয়ে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো হচ্ছে।
কিন্তু এই সবকে ছাপিয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার বারবেলার ঘটনা।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েনের অভিযোগ, অবিলম্বে ধনকড়কে রাজ্যপালের পদ থেকে না সরালে অচিরেই রাজভবন ‘শাখা’য় রূপান্তরিত হয়ে যাবে। তিনি বিধানসভারও অবমাননা করছেন। তফশিলি জাতি, উপজাতির মানুষকেও অপমান করছেন। হেনস্থা করছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে এ জিনিস বরাবর চলতে পারে না। এদিন প্রায় একই সময়ে রাজ্যসভা এবং বিধানসভায় বিক্ষোভ করে তৃণমূল। সংসদ চত্বরে যখন সাংসদরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখর, তখন বিধানসভা চত্বরে বি আর আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায় বিধায়কদের। তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়কদের অভিযোগ, গত সপ্তাহের দু’দিন রাজ্যপালের কারণে বিধানসভার অধিবেশন মুলতবি হয়ে গিয়েছে। এসসি, এসটি বিল সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিলে রাজ্যপাল সই না করায় বিধানসভার কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
Comments are closed.