পঞ্চায়েতে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল ঝড়। দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি, তিনে নামল সিপিএম

প্রত্যাশা মতোই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে সবুজ ঝড়। সবকটি জেলায় বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে জয়-জয়কার তৃণমূল কংগ্রেসের। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের বেশিরভাগ আসন নিজেদের দখলে এনে গ্রাম বাংলায় নিজেদের নিরংকুশ আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূল। ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটের চেয়েও ভাল ফল করে তৃণমূল লোকসভা ভোটের আগে বুথ স্তরে আধিপত্য কায়েম করেছে। এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদ, মালদহের মতো কংগ্রেসের দখলে থাকা জেলাতেও এই প্রথমবার আধিপত্য কায়েম করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৬৬ শতাংশ আসনে এবার নির্বাচন হয়েছিল। তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে কারা উঠে আসে সেটাই জানার অপেক্ষায় ছিল রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের ফলাফলে স্পষ্ট, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বাম, কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে উঠে এসেছে বিজেপি। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলায়, গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ব্লকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এরাজ্য থেকে দুটি আসন পাওয়ার পরই আস্তে আস্তে শক্তিবৃদ্ধি করতে শুরুছিল বিজেপি। কিন্তু ২০১৬ বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে বাম এবং কংগ্রেসের আসন সমঝোতার পর পরিস্থিতির কিছুটা বদল হয়। বিধানসভা ভোটে মূল লড়াইটা হয় তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের। পরিস্থিতি ফের দ্রুত বদলাতে শুরু করে বিধানসভা ভোটের পর থেকে। বিধানসভা ভোটের পর কোচবিহার, তমলুক, উলুবেড়িয়া লোকসভা এবং কাঁথি দক্ষিণ, নোয়াপাড়া, সবং বিধানসভাসহ রাজ্যে যত উপনির্বাচন হয়েছে, সর্বত্রই ফের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। এবার পঞ্চায়েত ভোটে দেখার ছিল, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে শাসক দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন দল উঠে আসে। সেদিক থেকে এই পঞ্চায়েত ভোটের ফল থেকে স্পষ্ট, এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিই।
এবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রথম দিন থেকেই শাসক দলের বিরুদ্ধে বারবার সন্ত্রাসে অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। শাসক দলের পালটা যুক্তি ছিল, গ্রামে-গঞ্জে বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই তারা প্রার্থী দিতে পারছে না। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, বহু জায়গাতেই বিজেপি, সিপিএম কিংবা কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে জয়লাভ করেছেন নির্দল প্রার্থীরা, যারা অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বলেই এলাকায় পরিচিত। তৃণমূল শিবিরের দাবি, এই জয়ী নির্দল প্রার্থীরাও কালক্রমে তাদের সঙ্গেই যোগ দেবেন। তখন গ্রামে শাসক দলের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু ২০১৮ পঞ্চায়েতের ফলাফলে স্পষ্ট, গ্রাম বাংলার বুথস্তর পর্যন্ত সংঠন বিস্তারে ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছে বিজেপিই। সম্প্রতি, ত্রিপুরায় সরকার গড়েছেন মোদী-অমিত শাহরা। বৃহস্পতিবারই কর্ণাটকে সরকার গড়ে আরও একধাপ এগিয়েছে দিল্লির শাসক দল। এই পরিস্থিতিতে বাংলাতেও দু’নম্বরে উঠে এসে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে তৈরি হচ্ছে গেরুয়া শিবির।

Leave A Reply

Your email address will not be published.