গুরুং-লাকরার পর তৃণমূলকে সমর্থন রাজবংশীদের, উত্তরের রাজনৈতিক সমীকরণে আমূল পরিবর্তন?
উত্তরবঙ্গে কি জমি উদ্ধার করতে সফল হচ্ছে তৃণমূল?
উত্তরবঙ্গে আরও একধাপ এগোল তৃণমূল। বিমল গুরুং, রাজেশ লাকরার পর এবার বিধানসভায় তৃণমূলকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করল রাজবংশী সংগঠনের যৌথ মঞ্চ।
উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির সবকটি রাজবংশী সংগঠন মিলে তৈরি হয়েছে ভূমিপুত্র ঐক্য মঞ্চ। এই মঞ্চ আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করবে। পাশাপাশি বিমল গুরুংকে সঙ্গে নিয়ে জনজাতির অধিকার রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে। বুধবার জলপাইগুড়ির জেলা শাসককে স্মারকলিপি জমা দেন ঐক্য মঞ্চের সদস্যরা। ডিএমের মাধ্যমে দাবি পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে।
ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক তথা কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অতুল রায় জানিয়েছেন, কামতাপুরি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে ছেলেখেলা করেছে বিজেপি। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গুরুং ও আমরা বারবার বিজেপিকে সমর্থন করেও কিছুই পাইনি।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করলেও রাজ্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা অতুল রায়ের গলায়। তিনি বলেন উত্তরবঙ্গের আদি জনজাতির উন্নয়নে মমতা ব্যানার্জি একের পর এক কাজ করেছেন। আমরা জানি রাজ্যের হাত বাঁধা। কিন্তু মমতা চেষ্টার কসুর করেননি। আমরা মমতার পাশে থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
মঞ্চে যোগ দেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের বংশীবদন বর্মন। ঐক্য মঞ্চে রয়েছে রাজবংশীদের মুসলিম সংগঠনও।
মমতা সরকার কামতাপুরিদের পৃথক ভাষার স্বীকৃতির পাশাপাশি নিজস্ব ভাষায় সিলেবাস, পৃথক উন্নয়ন বোর্ড ও সাংস্কৃতিক বোর্ড গঠন সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। যা রাজবংশী সম্প্রদায়কে তৃণমূলের কাছে টানতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এই প্রেক্ষাপটে রাজবংশী সম্প্রদায় মমতা ব্যানার্জির পাশে থাকার কথা ঘোষণা করায় স্বস্তিতে উত্তরবঙ্গে আপাত বিপন্ন তৃণমূল।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল। সম্প্রতি জলপাইগুড়িতে এসে মমতা অনুযোগের সুরে জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কী দোষ করেছিলাম যে একটা আসনও পেলাম না? উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায় অন্তত ৫৪ টি আসনে জয় পরাজয় নির্ধারণ করে। লোকসভা ভোটে সেই রাজবংশী সম্প্রদায় ঢেলে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় এবার মুখ ফেরাচ্ছেন তারা।
উত্তরবঙ্গের গোর্খা ভোটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বিমল গুরুং, সবচেয়ে বড়ো আদিবাসী সংগঠনের সভাপতি রাজেশ লাকরা ইতিমধ্যেই তৃণমূলের সঙ্গে এসেছেন। এবার উত্তরবঙ্গে ভোটের সবচেয়ে বড়ো নিয়ন্ত্রক রাজবংশীরাও তৃণমূলের পাশে আসায় স্বভাবতই চাপে বিজেপি।
পাল্টা হিসেবে জিএনএলএফয়ের মত পাহাড়ের ছোট দলগুলোকে কাছে টানার পাশাপাশি পাহাড়ের ১১ টি জনজাতিকে তপসিলি জাতির স্বীকৃতি দেওয়ার কাজও শেষ পর্যায়ে। আর এই পদক্ষেপ নতুন করে সমস্যার জন্ম দিয়েছে। জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়ে অতুল রায়ের ঘোষণা, উত্তরবঙ্গের আদি জনজাতি কামতাপুরি, নস্যশেখ সহ অন্য আদি জনজাতিদের রক্ষাকবচ চালু না করা হলে আগুন জ্বলবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পাহাড়ের ১১ টি জনজাতিকে এক তরফা তপসিলি জাতির মর্যাদা দেওয়া হলে সমতলে উত্তপ্ত হতে পারে পরিস্থিতি।
সবমিলিয়ে লোকসভা ভোটে যে উত্তরবঙ্গ হতাশ করেছিল তৃণমূলকে, বিধানসভার আগে সেই উত্তরবঙ্গেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ঘাসফুল নেতৃত্ব।
Comments are closed.