মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে গ্লোবাল সংস্থাকে ভারতে ডেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মোদীর সেই স্লোগানে বড় ধাক্কা লাগলো টয়োটার সিদ্ধান্তে। কঠোর কর কাঠামোয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে বিশ্বের অন্যতম বড় গাড়ি নির্মাণ সংস্থা জানিয়ে দিলো, ভারতে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে না।
ভেঙে পড়া অর্থনীতির পালে অক্সিজেন যোগাতে বিদেশি সংস্থাকে ভারতে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়াকেই পাখির চোখ করেছে মোদী সরকার। কিন্তু টয়োটার মতো সংস্থা দেশে ব্যবসা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে আখেরে মোদীর পরিকল্পনাই ধাক্কা খাবে।
জাপানি টয়োটার লোকাল পার্টনার টয়োটা কির্লোস্কার মোটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখর বিশ্বনাথন সম্প্রতি একটি ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, ভারতের কঠোর কর কাঠামো প্রচুর পরিমাণে উৎপাদনের সহায়ক নয়। তাই ব্যবসা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। শেখর বিশ্বনাথনের ব্যাখ্যা, ভারতের দু চাকা ও চারচাকার গাড়ির উপর সরকার বিপুল পরিমাণ কর চাপায়। ফলে তা বিক্রি কম হয়। বিক্রি কম হলে ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন কমে যায়। উৎপাদন কমে গেলে নতুন চাকরি তৈরির সম্ভাবনা নেই। পুরনো চাকরিও রাখা সমস্যার।
এই বাস্তব সমস্যার দিকে তাকিয়ে টয়োটা ভারতে ব্যবসা না বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রথম ভারতে গাড়ি বিক্রি শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বড় গাড়ি নির্মাণ সংস্থা টয়োটা। ভারতের ব্যবসায় জাপানি টয়োটার ৮৯ শতাংশ শেয়ার আছে।
ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, অগাস্টে টয়োটার মার্কেট শেয়ার কমে হয়েছে ২.৬ শতাংশ। অথচ গত বছর এই সময় তা ছিল ৫ শতাংশ।
তাহলে কি ভারতে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে টয়োটা? তাদের ভারত শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট বলছেন, ব্যবসা চলবে, তবে সম্প্রসারণের দিকে যাচ্ছি না।
ভারতে মোটর ভেহিকেলস আইন অনুযায়ী চার চাকা, দু চাকা এবং স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকলে (SUV) ২৮ শতাংশ কর দিতে হয়। গাড়ির দৈর্ঘ এবং ইঞ্জিনের ক্ষমতা অনুযায়ীও ১ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। ৪ মিটার লম্ব SUV গাড়ির ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি হলে কর দিতে হবে ৫০ শতাংশ।
গাড়ি বাজারের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জটিল এবং চড়া করের হারে বিদেশি সংস্থাগুলো ভারতে ব্যবসা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ২০১৭ সালে জেনারেল মোটরস কর্পোরেশন ভারতে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছে। ফোর্ড মোটরস কর্পোরেশনও নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাকে হস্তান্তর করে দেবে খবর। গাড়ি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছর আগে এই ফোর্ডেরই ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের প্রথম তিনটি গাড়ি সংস্থার মধ্যে ঢুকে পড়ার।
Comments are closed.