বাংলা নিউজেও TRP জালিয়াতি? এবিপি আনন্দর চিঠি নিয়ামক সংস্থা BARC কে, অভিযোগ একাধিক চ্যানেলের বিরুদ্ধে
অর্ণব গোস্বামীর রিপাবলিক টিভি টিআরপি জালিয়াতি করেছে বলে মুম্বই পুলিশ যে অভিযোগ এনেছে, তাতে উত্তাল গোটা দেশের মিডিয়া। সংবাদমাধ্যমই খবরের কেন্দ্রে।
মুম্বই পুলিশের অভিযোগের পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, এই টিআরপি জালিয়াতি কি বাংলাতেও হয়? টিআরপি চুরি করে কি প্রভাবিত করা হচ্ছে এরাজ্যেরও বিজ্ঞাপনের বাজারকে? প্রভাবিত করা হচ্ছে দর্শকদের?
বিভিন্ন চ্যানেলের TRP নিয়ামক সংস্থা BARC (ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল) সূত্রে খবর, এরাজ্যের এক নম্বর নিউজ চ্যানেল ABP ANANDA সম্প্রতি টিআরপি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তাদের চিঠি দিয়েছে। একটি নির্দিষ্ট নিউজ চ্যানেলের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে অভিযোগ। BARC কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জাতীয় সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে যেখানে এক নম্বর চ্যানেলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, সেখানে এরাজ্যের এক নম্বর চ্যানেল কেন অভিযোগ জানাল টিআরপি জালিয়াতির?
BARC বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের টিআরপির যে মূল্যায়ন করে তাতে মূলত দুটি বিষয় থাকে। প্রথমত, কতজন সেই চ্যানেল দেখেছেন। এবং দ্বিতীয়ত, কতক্ষণ ধরে দেখেছেন।
সূত্রের খবর, এই দুই প্যারামিটারের মধ্যে প্রথমটিতে এবিপি আনন্দ বাংলার অন্যান্য সমস্ত নিউজ চ্যানেলের তুলনায় বহু এগিয়ে থাকলেও, দ্বিতীয়টিতে, অর্থাৎ কতক্ষণ সময় কেউ চ্যানেল দেখছেন তাতে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে কখনও দুই বা কখনও তিন নম্বরে! অথচ বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি সূচকই গুরুত্বপূর্ণ।
BARC প্রতি সপ্তাহে টিআরপি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রাজ্যের নিউজ চ্যানেলগুলির সর্বশেষ, ৩৯ তম সপ্তাহের টিআরপি রিপোর্ট (২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর) অনুযায়ী, এবিপি আনন্দর মার্কেট শেয়ার ৪১%। দ্বিতীয় স্থানে ২৪ ঘণ্টা, ২০%, তিন নম্বরে কলকাতা টিভি ১৭%। বাকি নিউজ চ্যানেলগুলোর মার্কেট শেয়ার ১০ এর নীচে। কিন্তু টিআরপির দ্বিতীয় সূচক TSPV (টাইম স্পেন্ট পার ভিউয়ার) তে এই সপ্তাহে এক নম্বরে কলকাতা টিভি, দু’নম্বরে এবিপি আনন্দ। এই সূচকে ২৪ ঘণ্টা চার নম্বরে! এই সূচকে সামগ্রিকভাবে এবিপি আনন্দ দু’নম্বরে থাকলেও, সকালে প্রচারিত খবরে (সকাল ৬ টা থেকে ১০ টা) তারা তিন নম্বরে।
BARC সূত্রে খবর, গত ২৫ সেপ্টেম্বর এবিপি আনন্দ কর্তৃপক্ষ তাদের একটি চিঠি দিয়েছে এবং সেখানে টিআরপি কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। একাধিক নির্দিষ্ট চ্যানেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এবিপি আনন্দ কর্তৃপক্ষ সেই চিঠিতে লিখেছে, দীর্ঘদিন ধরেই তারা মার্কেট শেয়ারে রাজ্যে এক নম্বর জায়গায় রয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চ্যানেলের তুলনায় তাদের মার্কেট শেয়ার দ্বিগুণ, আড়াইগুণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চ্যানেল একজন দর্শক গড়ে কত সময় দেখছেন, এই সূচকে দীর্ঘদিন ধরেই তারা কখনও দ্বিতীয় স্থানে, কখনও তৃতীয় স্থানে। এটা মার্কেট শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একাধিক নির্দিষ্ট চ্যানেলের বিরুদ্ধে টিআরপি জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে এবিপি আনন্দ।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, মুম্বই পুলিশ যেভাবে তদন্ত করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে টিআরপি জালিয়াতির প্রসঙ্গ সামনে এনেছে, সেই একই জিনিস দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে বাংলাতেও। এখানেও তদন্ত করলে সেই কারচুপি সামনে আসবে।
কীভাবে হয় কারচুপি
জানা যাচ্ছে, কোন চ্যানেল কতক্ষণ চলছে, কতজন দর্শক কত সময় দেখছেন তার ওপর রিপোর্ট তৈরি করে BARC। অভিযোগ, টিআরপি মাপার যন্ত্র যেখানে বসানো রয়েছে এমন কিছু বাড়িতে বা নির্দিষ্ট জায়গায় অর্থের বিনিময়ে সারাদিন টিভি চালিয়ে সেই চ্যানেল অন করে রাখা হয়। যার জেরে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের টিআরপি বেড়ে যায়। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, এমন বাড়ির হদিশও তারা পেয়েছে, যেখানে কেউ হয়তো সারাদিন থাকেন না, কিন্তু টিভিতে নির্দিষ্ট চ্যানেল চলছে। এই একই ঘটনা কি রাজ্যেও ঘটছে, সেই প্রশ্নই উঠে গেল। এবিপি আনন্দর চিঠি এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল।
Comments are closed.