লকডাউনে ঘরবন্দি ভারতের প্রথম পছন্দ দূরদর্শন, রামায়ণ-মহাভারত ফিরিয়ে বাজিমাত ডিডির

কথায় আছে, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে।

লকডাউনের ভারতে ধাক্কা খেয়েছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্র। বন্ধ কল-কারখানা, স্তব্ধ ট্রেন চলাচল, স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি… তালা বন্ধ সবই। অথচ এই অভূতপূর্ব বন্ধ্যা সময়ে ফুল ফোটাচ্ছে বেতো ঘোড়া দূরদর্শন! লকডাউনে যখন সব থমকে দাঁড়িয়ে, তখন দূরদর্শন ঝুলি থেকে বের করেছে রামায়ণ, মহাভারত, ব্যোমকেশ বকসি থেকে শক্তিমান। আর তাতেই বাজিমাত।

করোনার বিরুদ্ধে ভারত যখন ঘরবন্দি তখন নয়ের দশকের মহাভারত-রামায়ণ কিংবা ব্যোমকেশ মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ফেলে আসা দিনগুলোয়। শক্তিমানের পুনঃপ্রচার ফেরাচ্ছে ছেলেবেলা।

করোনাভাইরাস এবং তার জেরে লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষ আরও বেশি বেশি করে টিভিতে চোখ রাখতে শুরু করেছেন। আর পরিসংখ্যান বলছে, তা বাড়ছে প্রতিদিন।

ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল বা BARC ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ৩ এপ্রিল যে সপ্তাহ শেষ হল, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৩ নম্বর সপ্তাহে ভারতীয় দর্শকরা টিভি দেখেছেন ১.২৭ ট্রিলিয়ন মিনিট। যা সর্বকালীন রেকর্ড।

প্রাক লকডাউন পর্ব অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ১১ থেকে ৩১ তারিখের তুলনায় বর্তমান সময় টিভি উপভোক্তা বেড়েছে ৪৩%। দৈনিক টিভি দেখছেন যাঁরা, তাঁদের সংখ্যায় ১২% বৃদ্ধি হয়েছে। যে ভারতে প্রাক করোনা পর্বে টিভির রিচ ছিল ৫৬০ মিলিয়ন। ১৩ নম্বর সপ্তাহে এসে দেখা যাচ্ছে তা পৌঁছে গিয়েছে ৬২৭ মিলিয়নে।

একজন ঘরবন্দি মানুষ দৈনিক টিভির সামনে বসে থাকেন যে সময়, তাতেও ব্যাপক বৃদ্ধি। আগে একজন গড়ে দৈনিক ৩ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট টিভির সামনে বসতেন। লকডাউন চলাকালীন তা বেড়ে হয়েছে ৪ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।

দর্শকরা যে একটি চ্যানেলই দেখছেন, তেমনটা মোটেই না। রিপোর্ট বলছে, কনটেন্টের খোঁজে মানুষ গড়ে ২৩ বার করে চ্যানেল ফ্লিপ করছেন। টিভির ভাষায় প্রাইম টাইম মানে সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১১ টা অবধি দর্শক সংখ্যা বেড়েছে ১১% আর নন প্রাইম টাইমে সেই বৃদ্ধির হার ৮১%।

টিভি দেখার সময়ও বদলে দিয়েছে লকডাউন। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, লোকজন রাত ১ টা থেকে রাত ২ টো অবধি টিভি দেখছেন। আবার ভোর ৪ টে থেকে ৬ টার স্লটেও দর্শকের সংখ্যা বাড়ছে।

গোটা দুনিয়ায় খেলাধুলো বন্ধ। সেই ঝাপটা এসে পড়েছে স্পোর্টস চ্যানেলগুলোতে। সমস্যা সমাধানে তারাও পুরনো খেলা দেখানোর রাস্তায় হাঁটছে। স্টার স্পোর্টস দেখানো শুরু করেছে ক্লাসিক ক্রিকেটস। আর তাতে ১২ নম্বর সপ্তাহের তুলনায় ১৩ নম্বর সপ্তাহে স্টার স্পোর্টসের ভিউয়ারশিপ বেড়েছে ২১%। সোনি ডব্লুডব্লুই ব্লকবাস্টার দেখাচ্ছে। সেখানেও বৃদ্ধির হার একই।

তবে এই আকাশছোঁয়া বৃদ্ধির সিংহভাগ কৃতিত্ব টিভি নিউজ এবং অবশ্যই সিনেমা দেখানোর চ্যানেলের। এই দুই চ্যানেল ক্যাটেগরি সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে।

জানুয়ারি মাসের তুলনায় বর্তমানে ঘরবন্দি ভারতবাসীর সিনেমার চ্যানেল দেখা বেড়েছে ৭৭%। ৫৪% ভিউয়ার অন্তত ১ ঘণ্টার বেশি সময় কাটিয়েছেন টিভিতে সিনেমা দেখে। আর এই সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

তবে দিনের শেষে উজ্জ্বল সেই দূরদর্শনই। BARC রিপোর্ট বলছে, ডিডি ন্যাশনালে যখন রামায়ণ টেলিকাস্ট হচ্ছে, তখন তাদের দর্শক বেড়ে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক। সকাল ৯ টা থেকে সাড়ে ১০ টা অবধি দেখানো রামায়ণের দর্শক যেখানে বেড়ে ৩৯০ গুণ, সেখানে রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ১০ টার স্লটে রামায়ণ দেখছেন ৪৫০ গুণ বেশি মানুষ। স্বভাবতই জেনারেল এন্টারটেনমেন্ট ক্যাটেগরিতে বেতাজ বাদশা দূরদর্শন।

Comments are closed.