বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতে নগদ হস্তান্তরের সওয়াল সিআইআই প্রেসিডেন্ট উদয় কোটাকের, বললেন টাকা দেওয়ার এটাই সঠিক সময়
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের পথ ধরে এবার সরাসরি নগদ হস্তান্তরের পক্ষে সওয়াল করলেন সিআইআই প্রেসিডেন্ট তথা কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের এমডি ও সিইও উদয় কোটাক। বললেন, দেশ যখন লকডাউন শেষ করে স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগোতে শুরু করছে, তখনই নগদ হস্তান্তরের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উদয় কোটাকটে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অর্থনীতি খোলার একেবারে শুরুর লগ্নে কিছু জিনিসের চাহিদা তৈরি হবে, এটা ঠিকই। কিন্তু তা সাময়িক। তারপর ক্রমশই চাহিদা কমতে থাকবে। কারণ মানুষের হাতে চাহিদা পূরণে রসদের অভাব রয়েছে। তাই বাজারে চাহিদার সূচককে অক্ষুণ্ণ রাখতে এখনই নগদ হস্তান্তরের আদর্শ সময়।
তবে সেই সঙ্গে উদয় কোটাক সরকারের রাজকোষ ঘাটতির বিষয়টি নিয়েও নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে, এখন যা অবস্থা তাতে সরকারের পক্ষে রাজকোষ ঘাটতির ক্রমাগত বেড়ে চলার দিকে নজর না দিয়ে উপায় নেই। কিন্তু সরকারকে হয়ত এটা করতেই হবে।
অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি কিংবা রঘুরাম রাজনই শুধু নন, সরাসরি নগদ হস্তান্তরের পক্ষে সওয়াল করেছেন আরও একাধিক অর্থনীতিবিদ। তাঁদের বেশিরভাগের মতে, সরকার ঘোষিত ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ আগে থেকে ঝিমিয়ে থাকা বাজারের চাহিদা বৃদ্ধিতে খুব একটা সহায়ক হবে না।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের এমডি এবং সিইও উদয় কোটাকের মুখেও কার্যত সেই কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। তিনি বলেছেন, চাহিদার সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রা জড়িত। তাই চাহিদা বাড়াতে নিম্ন আয়ের পরিবারে সরাসরি নগদ পৌঁছে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাতে সেই পরিবারে কাজ কিংবা চাকরি হারানোর যন্ত্রণার উপর খানিকটা হলেও প্রলেপ দেওয়া যায়। একইসঙ্গে তা বাজারে চাহিদা তৈরি করতেও সহায়ক হয়। উদয় কোটাকের মতে, বাজারে চাহিদার সূচককে ঊর্দ্ধমুখী রাখতে যা যা করতে হয়, এই মুহূর্তে সরকারের সেটাই করা উচিত।
আর এখানেই ঘুরেফিরে আসছে সেই অব্যবস্থার প্রসঙ্গ। মানুষের হাতে সরকার সরাসরি নগদ তুলে দিতে চাইলে এক বৃহত্তর অব্যবস্থা এবং দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রেও কার্যত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বলা কথারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল সিআইআই প্রেসিডেন্ট কোটাকের গলাতেও। তিনি বললেন, কিছু অপচয় অবশ্যই হবে, কিন্তু কিছুই না করার চেয়ে সামান্য কিছু করাও অনেকটা অগ্রগতি নয়?
উদয় কোটাকের মতে ভারতের রাজকোষ ঘাটতি এই অর্থ বছরের জিডিপির ১১.৫% থেকে ১২% হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। যেখানে গত অর্থ বছর ভারত শেষ করেছে ৪.৫৯% রাজকোষ ঘাটতি নিয়ে, সেক্ষেত্রেও লক্ষ্য ছিল ৩.৮%। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বরাদ্দ অর্থ খরচের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে হবে বলে মনে করেন উদয় কোটাক। কারণ ঘাটতি যেমন আকাশ ছোঁয়া করা যাবে না, তাহলে তার প্রভাব পড়বে রেটিং এজেন্সিগুলোর দেওয়া মানের উপর, তেমনই বাজারে চাহিদার গতি সমানভাবে বজায় রেখে যেতে হবে।
Comments are closed.