সম্প্রতি জেএনইউ প্রাক্তনী, ছাত্রনেতা উমর খালিদ এসেছিলেন রাজ্যে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব আইন, এনপিআর, এনআরসি বিরোধী সভায় যোগ দেন। তাঁর মুখোমুখি thebengalstory.com
প্রশ্নঃ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, যারা দেশ বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেএনইউ-এর আজাদি স্লোগানের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন তিনি। এ বিষয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
উত্তরঃ দেশ বিরোধী স্লোগান আরএসএস দেয়। গডসে জিন্দাবাদ বলে ওরা। গডসের প্রশংসা করে। প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর গডসের প্রশংসা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? জেএনইউ-এর আজাদি স্লোগান নিয়ে বিতর্ক বহু পুরনো। সরকার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। চার্জশিটও দিতে পারেনি এত বছরে। শুধুমাত্র মানুষের দৃষ্টি মূল ইস্যু থেকে ঘোরানোর জন্য এই সব কথা বলা হচ্ছে।
Related Posts
প্রশ্নঃ জেএনইউতে আক্রান্ত ছাত্র সংসদ সভানেত্রী ঐশী ঘোষের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের হয়েছে। অথচ ৫ তারিখে তাঁর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কী বলবেন?
উত্তরঃ এই সরকারের আমলে যাঁরা অত্যাচারিত হন, তাঁদের বিরুদ্ধেই উল্টে কেস দেওয়া হয়। আখলাককে গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়েছিল, তাঁর নামেই কেস দেওয়া হয়েছিল। গত কয়েকদিনে উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২০ জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই কেস দেওয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে তারা এই কাজই করে চলেছে। এটা আর নতুন কী?
প্রশ্নঃ কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে? এর কারণটা কী?
উত্তরঃ গুন্ডারাজের উদাহরণ এটা। আসলে গুন্ডারাজ চলছে দেশে। সরকার, পুলিশ,বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবাই মিলে প্রতিবাদীদের গলা বন্ধ করে দিতে চাইছে এইভাবে।
প্রশ্নঃ দীপিকা পাড়ুকোন সম্প্রতি জেএনইউ তে গিয়েছিলেন। তার পরে তাঁর ছবি বয়কটের ডাক দেওয়া হয় বিজেপির তরফে। কীভাবে দেখছেন এই বিষয়টিকে?
উত্তরঃ কেউ বয়কট করতে চাইলে করতেই পারেন। সেটা তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু ওখানে গিয়ে দীপিকা শুধু দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোনও ভাষণ দেননি। কোনও কথা বলেননি। তার পরেও যদি তাঁকে এই ভাবে আক্রমণ করা হয়, এর থেকেই প্রমাণিত হয়, এই সরকার কতটা ভয় পেয়েছে। কারও কথায় সামান্য বিরোধিতার আভাস পেলেই এই সরকার ও শাসক দল তাঁর বিরুদ্ধে এইভাবে উঠেপড়ে লাগছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারকাছ মাড়ায় না এই বিজেপি সরকার।
প্রশ্নঃ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, এ রাজ্যেও প্রতিবাদীদের কুকুরের মতো গুলি করে মারা হবে।
উত্তরঃ সত্যি কথা বলতে কী, আমি খুব একটা অবাক হইনি, ওঁর এই কথা শুনে। এটাই বিজেপির সংস্কৃতি। সম্প্রতি কর্ণাটকের এক বিজেপি নেতা গোধরা কাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়েছিলেন। এগুলো হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর ফলে নিচুতলার কর্মীরা উৎসাহ পান।
প্রশ্নঃ সম্প্রতি কলকাতা সফরে এসে বেলুড় মঠে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে যুব দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেছেন, সিএএ নিয়ে যুব সম্প্রদায় ঠিকই বুঝছে। কিন্তু বিরোধীরা তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তরঃ নরেন্দ্র মোদী ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন যে, যুব সম্প্রদায়কে ভুল বোঝানো হচ্ছে। কংগ্রেস তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। যেভাবে যুব সম্প্রদায় এবং বিরোধীরা পথে নেমেছে, এতে প্রধানমন্ত্রী বিচলিত। তাঁর এই ধরনের মন্তব্য তারই প্রমাণ। যুব সম্প্রদায় এই সরকারের সব থেকে বড় বিরোধী। তাই জামিয়া,আলিগড়, জেএনইউ-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বদনাম করতে চাইছে এই সরকার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে থেকে আলাদা করে দেখাতে চাইছে এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে। কিন্তু তাদের এই বিভাজন নীতিই আজ একত্রিত করেছে দেশকে। আর এই আন্দোলনের ফলেই এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মোদী যে, তিনি বেলুড় মঠে দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন।
Comments are closed.