উন্নাও কাণ্ডে মুখ্য অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারকে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কার করেছে বিজেপি। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে উন্নাও মামলা সরছে দিল্লিতে। এবার মিলবে সুবিচার, এমনটাই মনে করছে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এই প্রেক্ষিতে আসুন দেখে নেওয়া যাক, সাল-তারিখের হিসেবে কীভাবে মোড় নিয়েছে উন্নাও কাণ্ড।
১১ ই জুন, ২০১৭- উত্তর প্রদেশের মানখি গ্রাম থেকে বেপাত্তা হয় এক নাবালিকা। পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করে।
১৭ ই জুন, ২০১৭- কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার, তাঁর ভাই অতুল সিংহ এবং তাঁদের সঙ্গীরা নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। নাবালিকাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনার ঠিক দু’মাস আগে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তর প্রদেশের ক্ষমতা দখল করেছেন যোগী আদিত্যনাথ।
২০ শে জুন, ২০১৭- নাবালিকার হদিশ মেলে অন্য একটি গ্রামে। তাঁকে সেখান থেকে উন্নাওতে নিয়ে আসা হয়। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। যদিও তাতে দাপুটে বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গারের নাম লেখার সাহস দেখায়নি পুলিশ।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮- নির্যাতিতা নাবালিকার মা দ্বারস্থ হন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। উদ্দেশ্য একটাই, বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা শুরু। কিন্তু অভিযোগ, তাও নিষ্কৃয় ছিল উন্নাও পুলিশ। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য নির্যাতিতার পরিবারকে সেঙ্গারের লোকজনের লাগাতার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তবুও দমেননি তাঁরা।
৩ রা এপ্রিল, ২০১৮- নির্যাতিতার বাবা সুরেন্দ্রকে প্রকাশ্য দিবালোকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রড, বেল্ট, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে সেঙ্গারের ভাই অতুল সিংহ এবং তাঁর সঙ্গীরা। মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যান সুরেন্দ্র। পরে মারধরের ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ ঘটনার অভিযোগ দায়ের করে ঠিকই, কিন্তু রহস্যজনকভাবে বাদ যায় সেঙ্গারের ভাই অতুলের নাম। যদিও ভিডিওয় সুরেন্দ্র বারবার এই নাম ধরেই অভিযোগ করছিলেন।
৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮- এবার কাহানিমে ট্যুইস্ট। পুলিশ বিনা লাইসেন্সে বন্দুক রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে নাবালিকার বাবা সুরেন্দ্রকে। পরিবারের লোকেদের আশঙ্কা ছিল, খারাপ শারীরিক অবস্থায় তাঁকে পুলিশ আরও মারধর করবে। পাশাপাশি পুলিশ জানায়, সেঙ্গার এবং নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের মধ্যে গত ১০-১২ বছর ধরেই বিভিন্ন গোলমাল চলছে। তা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে।
৮ ই এপ্রিল, ২০১৮- চাপের মুখে দিশেহারা নির্যাতিতার পরিবার শেষ চেষ্টা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের লখনউয়ের বাসভবনের সামনে ধরণা দেন। নির্যাতিতা বলেন, ‘আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছে না। আমি চাই ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকে গ্রেফতার হোক, না হলে আমি নিজেকে শেষ করে দেব।’ সেই প্রথম জাতীয় শিরোনামে উঠে আসে উন্নাও কাণ্ড। গ্রেফতার তো দূরস্থান, মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সেঙ্গার অবশ্য তখনও নিজের অবস্থানেই অনড়। তাঁর দাবি, তাঁকে ফাঁসাতে পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ফাঁসানো থেকে বাঁচানোর জন্য পুলিশের ভূমিকারও ভূয়সী প্রশংসা করেন বিজেপির বিধায়ক।
৯ ই এপ্রিল, ২০১৮- পরিবারের আশঙ্কা সত্যি করে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। সেঙ্গারকে দেখা যায় যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনে।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৮- নির্যাতিতার বাবাকে পেটানোর অভিযোগে সেঙ্গারের ভাই অতুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১২ ই এপ্রিল, ২০১৮- বিধায়ক সেঙ্গারের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট পুলিশের কাছে জানতে চায়, এখনও সেঙ্গারকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? উত্তর প্রদেশ পুলিশের হাত থেকে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮- তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার পরেই ভোররাতে সেঙ্গারকে তুলে নিয়ে যায় সিবিআই। সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দু’দিন পর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয় শশী সিংহ। অভিযোগ, ঘরের ভিতরে যখন বিধায়ক সঙ্গীদের নিয়ে গণধর্ষণ চালাচ্ছিলেন, তখন শশী দরজায় পাহারায় ছিল।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮- ‘হামারে বিধায়ক নির্দোষ হ্যায়’ ব্যানার, পোস্টার নিয়ে উন্নাওয়ের রাস্তায় মিছিল করে সেঙ্গারের অনুগামীরা। বিজেপির ফ্ল্যাগ নিয়েও সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন কিছু মানুষ।
৭ ই জুলাই, ২০১৮- নির্যাতিতার বাবাকে খুনের ঘটনায় সেঙ্গারের ভাই সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই।
১১ ই জুলাই, ২০১৮- বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গার এবং শশী সিংহের নাম ধর্ষণের মামলায় যুক্ত করে সিবিআই।
১৮ ই অগাস্ট, ২০১৮- নির্যাতিতার বাবার খুনের ঘটনায় অন্যতম প্রধান সাক্ষী ইউনুসের রহস্য মৃত্যু। সেদিনই তাঁকে কবরও দিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতিতার পরিবার সিবিআইকে চিঠি লিখে তাঁদের সন্দেহের কথা জানিয়ে নিরাপত্তার দাবি করেন।
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮- ধর্ষণের ঘটনার সময় তিনি নাবালিকা ছিলেন, এই সংক্রান্ত ভুয়ো কাগজ দেওয়ার অভিযোগে নির্যাতিতা, তাঁর মা এবং কাকার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত শশী সিংহের স্বামী হরিপাল সিংহ।
৪ ঠা জুলাই, ২০১৯- দু’দশকের পুরনো একটি মামলায় নির্যাতিতার কাকাকে ১০ বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়। রায়বেরেলি জেলেই বর্তমানে রয়েছেন তিনি। গত রবিবার কাকার সঙ্গে দেখা করতে মাসি, কাকিমা ও আইনজীবীকে নিয়ে রায়বেরেলি যাচ্ছিলেন নির্যাতিতা তরুণী। মাঝ রাস্তায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু কাকিমা ও মাসির। হাসপাতালে মৃ্ত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন নির্যাতিতা তরুণী এবং তাঁদের আইনজীবী।
Comments are closed.