কু-সংস্কারকে ভেঙে ঋতুস্রাব চলাকালীন বেদ মন্ত্রচ্চারণ করে বাগদেবীর আরাধনা করলেন রায়গঞ্জের উষসী
কজন মহিলা হয়েও পৌরহিত্যের করা থেকে শুরু করে, শাস্ত্র পাঠ করা, মন্ত্রচ্চারণ করে বিয়ে দেওয়া এবং পুজোপাঠ করছেন।
আজকের সমাজে একজন পুরুষ যা করতে পারে, তা একজন নারী করতে পারেন না। যদি তা কোনও নারী করে তবে “শাস্ত্র লঙ্ঘন” করা হয়েছে বলে তাকে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এই শাস্ত্র কি? কে সৃষ্টি করেছে এই “শাস্ত্র”? কারোর কাছে এর উত্তর নেই। এই সবের যথাযোগ্য উত্তর দিয়ে, কুসংস্কারের তালা-চাবিকে ভেঙে রায়গঞ্জে উষসী চক্রবর্তী ঋতুস্রাব চলাকালীন বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে বাগদেবীর আরাধনা করলেন। আজ থেকে বহু যুগ আগে বৈদিক যুগে আমাদের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সে সময় বেদ পাঠে মেয়েদের কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে সমাজের কিছু ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী সমাজকে পুরুষতান্ত্রিক করে তোলে। যার ফলস্বরূপ মেয়েদের অধিকার খর্ব করা থেকে শুরু করে, নারীর সম্মান, এমন কি প্রত্যেক পদক্ষেপে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে নিজস্ব মতামতের অধিকারও পরিবর্তে হাতে-পায়ে পড়ানো হয়েছে নিয়মের শৃঙ্খল।
আজকের সমাজে ফের জাগরন ঘটেছে নারী শক্তির। একজন মহিলা হয়েও পৌরহিত্যের করা থেকে শুরু করে, শাস্ত্র পাঠ করা, মন্ত্রচ্চারণ করে বিয়ে দেওয়া এবং পুজোপাঠ করছেন। হয়তো তাতে এক শ্রেণীর মানুষদের গাত্রদাহ হচ্ছে, কিন্তু অনুপ্রেরণাও জোগাচ্ছে বহু মানুষকে। নারীর হাত ধরে বহুকালে অন্ধকার কাটিয়ে ধীরে ধীরে সূর্যের আলোয় আলোকিত হচ্ছে এই সমাজ।
অনন্ত কাল ধরে চলে আসা প্রথা ভেঙে একটা ধাপ এগিয়ে দাঁড়ালেন রায়গঞ্জের তরুণী ঊষসী চক্রবর্তী। সম্প্রতি তাঁর ফেসবুকের একটি পোস্ট ঘিরে তোলপাড় সোশ্যাল দুনিয়ায়। গত মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ছিল সরস্বতী পুজো। ওই দিন ঊষসী একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন, বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে নিজে হাতে সরস্বতী পুজো করেছেন তিনি। তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখেছেন পুজোপাঠের আচার অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ওই দিন মাসিক চলছিল তাঁর। মাসিকের দ্বিতীয় দিনেই সরস্বতী পুজো করেছেন ঊষসী। আর এই কথা প্রকাশ্যে আনতে পিছপা হননি সাহসিনী।
কিন্তু ঊষসীর ওই পোস্টের পরেই তাকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানারকম সমালোচনা। এক পক্ষ সশ্রদ্ধায় কুর্নিশ জানালেও আর এক পক্ষ আবার চরমভাবে নিন্দা ও সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে।
Comments are closed.