একটি মাত্র ভাইরাস। সারা বিশ্বকে ঘরবন্দি করে ছেড়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের জেরে বেশিরভাগ প্ৰতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মীদের কাজ সারতে হচ্ছে বাড়ি বসেই।
কয়েকমাসের মধ্যেই বদলে গিয়েছে কাজের পরিবেশ, সময় ও প্রকার। আগে যে গুটিকয়েক তথ্যপ্রযুক্তি ও ববহুজাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতিতে কাজ করত সেটাই এখন ছোট কিংবা বড়, প্রায় সমস্ত সংস্থার কাজের মূল মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশে মালিকপক্ষ ও কর্মী উভয়কেই এই নয়া মাধ্যমে কাজ করতে বিভিন্ন অসুবিধার মুখোমুখি হতে হলেও সময়ের দাবি মেনে প্রত্যেকেই এই ‘নিউ নর্মাল’ এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে এখন অফিস মিটিং করতে বিভিন্ন ওয়েব মিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে। পড়ুয়াদের ক্লাসও হয়ে গিয়েছে অনলাইনে।
Virtual Meeting কী?
এই কয়েক মাসে ছাত্রছাত্রী থেকে অফিসকর্মী, জননেতা থেকে রাজনৈতিক কর্মী, সবাই মোটামুটি পরিচিত হয়ে গিয়েছেন virtual meeting -এর সঙ্গে। তবু আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা দরকার, ভার্চুয়াল মিটিং হল ‘রিয়েল টাইম ইন্টেরাকশন’ যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে অডিও, ভিডিও, চ্যাট শেয়ার করতে পারেন। আলোচনা ও বৈঠক করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে বহু virtual meeting অ্যাপের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা।
অনলাইন বা ভার্চুয়াল মিটিংয়ের সুবিধা
ফিজিক্যাল মিটিংয়ের চেয়ে virtual meeting -এর বড় সুবিধা হল সময় ও অর্থে খরচ লাগাম টানা। অফিস হোক বা রাজনৈতিক বৈঠক, যে কোনও মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে একটা বড় সময় ব্যয় হয়। রাজনৈতিক বৈঠকের ক্ষেত্রে প্যান্ডেল তৈরি থেকে কর্মীদের আনা, খরচ ও সময় দুইই ব্যয় হয়। অফিস মিটিংয়ের ক্ষেত্রে কর্মীদের সময় মাফিক উপস্থিত হওয়া, ভ্রমণ, হোটেল খরচ ইত্যাদি মিলে বেশ মোটা টাকা ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। কিন্তু ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এ সবের বালাই নেই। বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আলোচনা সেরে নিতে পারছেন সবাই।
প্রযুক্তি আজ এমন জায়গায় গিয়েছে বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকেই কোন e-meeting অ্যাটেন্ড করা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে গেলে নির্দিষ্ট URL এ ক্লিক করে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকতে হয়। তাই মিটিংয়ে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাও পুরোমাত্রায় বজায় থাকছে।
ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য টিপস
১) ভার্চুয়াল মিটিংয়ের অন্যতম দিক হল সময়জ্ঞান। যে সময়ে virtual meeting হওয়ার কথা তার আগে কম্পিউটারের বসে পড়ুন। মিটিং শুরুর সময় তড়িঘড়ি করে অ্যাটেন্ড করতে গেলে নিজের ইমেজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে অনুপস্থিত হয়ে যেতে পারেন। তাই আগেভাগে প্রস্তুত থাকুন।
২) বাড়িতে বসে মিটিং করবেন ঠিক আছে, কিন্তু পোশাক আশাক, সাজ সজ্জার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
৩) কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে মিটিংয়ে বসেছেন, এদিকে ইমেল, মেসেজ বা ফেসবুকের নোটিফিকেশন ঢুকছে হুড়মুড়িয়ে। সে ক্ষেত্রে মিটিং থেকে মনোযোগ সরে যেতেই পারে। তাই মিটিংয়ে বসার আগেই অন্যান্য নোটিফিকেশন মিউট করে রাখুন।
৪) অনেক সময় মিটিংয়ের কথাবার্তা শোনার সমস্যা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফোনের স্পিকারে কথাবার্তা বললে এমনটা হয়। তাই হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করুন। এতে শোনার সমস্যা যেমন অনেকটাই মিটবে তেমনি মনোযোগেরও অভাব হবে না।
৫) E-meeting -এ বসার আগে মিটিংয়ের বিষয় এবং আপনার ভূমিকা মনে রাখুন। আগেভাগে লিখে রাখতে পারেন কোন কোন বিষয় মিটিংয়ে উত্থাপন করবেন। এতে সময় বাঁচবে, আত্মবিশ্বাস বজায় থাকবে এবং কথা বলতে গিয়ে আটকাতে হবে না, শব্দ খুঁজতে হবে না।
কিছু ভার্চুয়াল মিটিং অ্যাপের হদিস
সহজ ব্যবহার এবং সমৃদ্ধ ফিচারের কারণে ওয়েব মিটিং সফটওয়্যার হিসাবে জুম (ZOOM) বেশ জনপ্রিয়।
এছাড়া রয়েছে FaceTime, Skype, Hangouts Meet, Join.me, GoToMeeting/GotoWebinar ইত্যাদি।
FaceTime:
এই video communication অ্যাপকে বিজনেসের কাজেও ব্যবহার করা যায়। অ্যাপল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, সর্বোচ্চ ৩২ জন গ্রুপ চ্যাটে অংশ নিতে পারবে এমন সুবিধা আনা হচ্ছে iOS12 অপারেটিং সিস্টেমে। তবে এই অ্যাপ শুধুমাত্র অ্যাপল ইউজারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
Skype:
অতি পরিচিত এই ভিডিও কমিউনিকেশন অ্যাপে অনেকেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে। লং ডিস্টেন্স ফিজের মাধ্যমে গ্রুপ বা ইন্ডিভিজুয়াল ভিডিও কনফারেন্সের সুযোগ রয়েছে Skype তে। যদিও সাউন্ড ও ভিজুয়াল নিয়ে কখনও কখনও সমস্যায় পড়েন ব্যবহারকারীরা। এছাড়া ফ্রিজিং ও কল ড্রপের সমস্যাও দেখা যায়।
Hangout Meet:
২০১৩ সাল থেকে গুগল হ্যাংআউট মিট বেশ জনপ্রিয়। ২০১৭ সালে এই অ্যাপে ভিডিও কনফারিন্সং এর সুবিধা নিয়ে হাজির হয় গুগল। সর্বোচ্চ ৫০ জন ভিডিও চ্যাট ও মেসেজ করতে পারেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যান্ড্রয়েড, iOS উভয়ই এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। শোনা যাচ্চে আরও বেশ কিছু নয়া ফিচার আনতে চলেছে এই অ্যাপ।
এভাবে অন্যান্য ভার্চুয়াল মিটিং অ্যাপগুলিরও কিছু স্বতন্ত্র সুবিধা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে কিছু সমস্যাও। যেমন,
জুম অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি “জুম-বোম্বিং” বা “ভিডিও-টেলিকনফারেন্সিং হাইজ্যাকিং” নামে বিভিন্ন আক্রমণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। জুম মিটিং এর দুর্বলতাসমূহ ব্যবহার করে আক্রমণকারী মিটিংয়ের অ্যাকসেস নিয়ে, ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী উইন্ডোজের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ডটিও হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব আক্রমণ থেকে রক্ষায় জুম বা অন্যান্য ভার্চুয়াল মিটিং আয়োজক (HOST) এবং অংশগ্রহণকারীরা আগাম সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
জুম এবং অন্যান্য ভার্চুয়াল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ (How to Prepare for Virtual Meeting)
১. অ্যাপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপ স্টোর থেকেই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং তার Updated সংস্করণটি ব্যবহার করুন।
২. অ্যাপ্লিকেশনটি নিয়মিত আপডেট করুন।
৩. ব্যবহারকারীরা নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন (ডেস্কটপ, ল্যাপটপ এবং মোবাইল ডিভাইস)। অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করুন এবং সর্বদা সেগুলি আপডেট থাকুন।
৪. অপরিচিত ব্যবহারকারীর শেয়ার করা কোনও সন্দেহজনক লিঙ্ক ক্লিক করবেন না।
৫. মিটিং চলাকালীন গোপনীয় (Confidential) ডকুমেন্ট শেয়ার করবেন না। প্রয়োজনে অফিসিয়াল ই-মেল ব্যবহার করুন।
৬. মিটিংয়ে হোস্ট যাতে অংশগ্রহণকারীদের সহজেই সনাক্ত করতে পারেন, সেই জন্য সহজ ও অর্থপূর্ণ ডিসপ্লে নেম ব্যবহার করুন।
৭. ভার্চুয়াল মিটিং অ্যাপের অ্যাকাউন্টটি সুরক্ষিত রাখতে স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৮. মিটিং এর আয়োজক (HOST) এর মিটিং আইডি বা লিঙ্কগুলি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা ছাড়া অন্য কারও কাছে শেয়ার বা প্রকাশ করবেন না।
Comments are closed.