পঞ্চম দফায় ভোট দিচ্ছে বাংলা। তীব্র গরম আর প্যাঁচপ্যাঁচে ঘাম সঙ্গে নিয়ে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি, অশান্তির মধ্যে দিয়ে চলছে ভোট গ্রহণ পর্ব। গোলমাল, হানাহানির বেশ খানিকটা উপরে দার্জিলিংয়েও ভোট চলছে। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি। মেজাজ ততোধিক শীতল। কে বলবে, এই দার্জিলিঙেই জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় নামতে চলেছেন পাহাড়ের রাজা! দেখে বোঝার উপায় নেই।
সেই ৮ এর দশক থেকেই পাহাড়ের ভোট রং হারিয়েছে। ঘিশিং যাঁর দিকে ঝুঁকতেন, তিনিই জিততেন। কোনওবার কংগ্রেস, কোনওবার সিপিএম, ব্যাল্যান্স করে সমর্থন দিতেন সুবাস ঘিশিং, এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ধ্বনিত হোত, ঘিশিংয়ের অনুমতি ছাড়া পাহাড়ে গাছের পাতাও পড়ে না।
২০০৭ সালে ঘিশিংয়ের সাম্রাজ্যে থাবা বসান একদা ডানহাত বিমল গুরুং। ঘিশিং পাহাড় ছাড়া হয়ে জলপাইগুড়িতে থাকতে শুরু করেন। নতুন দলের নাম হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। পাহাড়ে শুরু হয় বিমল রাজ। গুরুং যেদিকে জয় তাদের। পাহাড়ে নামমাত্র সংগঠন থাকা বিজেপি মোর্চার সমর্থনে এমপি, এমএলএ জেতাতে থাকে। ২০১৭ সালে মোর্চায় প্রথম ভাঙ্গন। বিজেপির ছাতা থেকে বেরিয়ে আসেন বিনয় তামাং। হাত মেলান তৃণমূলের সঙ্গে।
তারপর পাহাড়ে গোলমাল। গা ঢাকা দিয়েছেন। আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় গত লোকসভায় বিজেপিকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন সেই বিমল গুরুংই। তারপর কাহানি মে ট্যুইস্ট!
গত বছর অক্টোবরে আচমকা কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করেন গুরুং। জানান, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং পাহাড়ে তৃণমূলকে জেতাবেন।
গুরুং ফেরেন পাহাড়ে। আর ফিরেই বুঝতে পারেন, সেই দিন আর নেই। বিনয় তামাংরা যেমন শক্তি বাড়িয়েছেন, তেমন বিজেপিও ডালপালা মেলেছে। এই পরিস্থিতিতে মোর্চার গুরুং পন্থী এবং বিনয় পন্থী দুই শিবিরই প্রার্থী দিয়েছে। আছে বিজেপির আলাদা প্রার্থীও। আর এর জেরে স্মরণাতীতকালের মধ্যে এই প্রথম পাহাড়ের ভোটে রং ফিরেছে। ম্যালের চারপাশ বা সিংমারির ক্যাফে, সর্বত্র কী হয় কী হয় ভাব!
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকালেই বিমল গুরুং স্ত্রীকে নিয়ে পাতলেবাসে ভোট দিয়ে আসেন। সংবাদমাধ্যমকে বলেন, খুব ভালো ভোট হবে। মানুষ দিদিকে আশীর্বাদ করছে। বিজেপির কোনও সমর্থন নেই। তাঁর প্রার্থীদের নিয়ে কী বলবেন? জেতার ব্যাপারে আশাবাদী? বিমল গুরুং আঙ্গুলের মুদ্রায় ভি দেখিয়ে হাঁটা লাগান বাড়ির দিকে। সেখানেই বিমলের পার্টি অফিস। বিমলের দীর্ঘদিনের সাথী রোশন গিরি অবশ্য ভোট দিতে পারলেন না। তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে বলে জানা গিয়েছে।
পাহাড়ের ভোট এবার প্রকৃত অর্থেই আলাদা। বহু বছর পর পাহাড়ের ভোটে উত্তেজনা মিশেছে। আগে থেকে বোঝা যাচ্ছে না জয়ের মুকুট উঠবে কার মাথায়। কিন্তু আঁচ করা যাচ্ছে, নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় বসেছেন পাহাড়ের রাজা বিমল গুরুং। তাঁর লড়াই শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে না, নিজের অস্তিত্ব রক্ষারও বটে। জীবনে এই প্রথম কি টেনশনে বিমল গুরুং? তামাং গোষ্ঠীর কাঁটা এড়িয়ে পারবেন বিজেপিকে মাত দিতে? দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং, ৩ কেন্দ্রেই এবার ত্রিমুখী লড়াই। মুচকি হাসেন সিংহাসনের খোঁজে পাহাড়ের পথে বেরনো গুরুং। লড়াই তো মার্জিনের। বিমল গুরুঙ্গের খেলায় জিত আছে, হার নেই।
Comments are closed.