‘শ্রীমান পঞ্চু’র জন্যই লেখা হয়েছিল ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’; ‘পঞ্চ পাণ্ডবের’ সৃষ্টি নিয়ে কী জানিয়ে ছিলেন খোদ ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জি?
বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু ও দলের মধ্যমণি পঞ্চু। দুঃসাহসী পাঁচটি ছেলে-মেয়ে ও কুকুর এবং তাঁদের একের পর এক রোমাঞ্চকর অভিযান। বাংলার শিশু কিশোর সাহিত্যের সঙ্গে প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’। কিশোর সাহিত্যের সেই কালজয়ী সৃষ্টি পাণ্ডব গোয়েন্দার লেখক চলে গেলেন শুক্রবার। রেখে গেলেন বাবলু, বিলু, বাচ্চু, বিচ্ছুদের। ছোটবেলা পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়তে পড়তে আমাদের অনেকবারই মনে হয়েছে মধ্য হাওড়ায় গেলে হয়তো সত্যি দেখা মিলবে পঞ্চ পাণ্ডবের। দেখা যাবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পাঁচ কিশোর কিশোরী এবং পুরো দলটির আগে আগে পঞ্চু। কিন্তু, সত্যি পাণ্ডব গোয়েন্দার সৃষ্টি হয়েছিল কীভাবে? পাণ্ডব গোয়েন্দার প্রতিটি ভক্তই এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চান? পাণ্ডব গোয়েন্দার ‘সৃষ্টি রহস্য’ সমাধান করে গিয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। কয়েক বছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে পাণ্ডব গোয়েন্দা লেখার ভাবনা কীভাবে এসেছিল, তা জানিয়েছিলেন খোদ ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জি।
মাত্র ১৫ বছর বয়েসেই দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জির প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। কামাখ্যা ভ্রমণ কাহিনী। এরপর থেকে বসুমতীর নিয়মিত লেখকের তালিকায় চলে এসেছিলেন বছর ১৫-এর কিশোর। তারপর জনসেবক পত্রিকা হয়ে আনন্দবাজারেও তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে শুরু করে। ২০ বছর বয়েসেই প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত পেয়ে গিয়েছিলেন পাণ্ডব গোয়েন্দার ‘অভিভাবক’। এর মধ্যেই ঘটনাচক্রে শুকতারার সম্পাদকের সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোর ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জির। শুকতারাতেও নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। লেখকের কথায়, শুকতারার সম্পাদকের অনুরোধেই তিনি পাণ্ডব গোয়েন্দা লিখতে শুরু করেন।
সাহিত্যিকের কথায়, শুকতারা সম্পাদকের অনুরোধ যেমন ছিল, পাণ্ডব গোয়েন্দা সৃষ্টির নেপথ্যে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল ‘পঞ্চুর’ও। পাণ্ডব গোয়েন্দার পাঠক মাত্রই জানেন, প্রতিটি অভিযানে পঞ্চুর ভূমিকা ঠিক কী? আর সেই পঞ্চুকে কীভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন, তা নিয়েই একটি চমকপ্রদ ঘটনা শুনিয়েছেন লেখক।
ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জির গ্রামের বাড়ি ছিল হুগলি জেলার নাড়ুগ্রাম নামে একটি গ্রামে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মধ্য হাওড়ার বাড়ি থেকে কিশোর বয়েসে একাই গ্রামের বাড়িতে যেতেন ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জি। এরকমই পুজোয় একা গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় লেখকের এক কাকা গ্রামের এক কুকুরকে উত্ত্যক্ত করতে ঢিল ছুঁড়ে মারছিলেন। কুকুরটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন কিশোর ষষ্ঠীপদ। লেখক জানতে পারেন, কুকুরটির নাম পঞ্চু। এবং চমপ্রদ বিষয়, লেখক যখন হাওড়ায় ফিরে আসছেন, পঞ্চুও তাঁর পিছু নেন। প্রথমে বাস, তারপর ট্রেনে চেপে লেখককে কার্যত অনুসরণ করে তাঁর হাওড়ার বাড়িতে এসে পৌঁছায় ‘শ্রীমান পঞ্চু’।
একটি রাস্তার কুকুরের এই বুদ্ধিমত্তা অবাক করেছিল ষষ্ঠীপদ চ্যাটার্জিকে। পঞ্চু তারপর থেকে লেখকের সঙ্গেই থাকতেন। এমনকী লেখক তাঁর বন্ধুদের নিয়ে আশেপাশে যেখানেই বেড়াতে যেতেন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল পঞ্চু। এক আড্ডায় লেখক এই পঞ্চুর কথাই বলেছিলেন শুকতারা পত্রিকার সম্পাদককে। এরপরেই ওই সম্পাদক লেখককে পরামর্শ দেন, বন্ধুদের এবং পঞ্চুকে নিয়ে ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস লেখার। এবং সেই থেকেই শুরু পাণ্ডব গোয়েন্দার পথচলা। সেই ১৯৭০ সাল থেকে প্রকাশিত পাণ্ডব গোয়েন্দার একের পর দুর্ধর্ষ অভিযান কিশোর কিশোরী তো বটেই বড়দের মনেও চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে।
Comments are closed.