জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পাকিস্তানে কী সুবিধে পেতে পারেন বন্দি ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন?
পাকিস্তানের হাতে বন্দি ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন। তাঁকে দ্রুত দেশে ফেরানোর দাবি জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। জেনেভা কনভেনশনের কথা উল্লেখে করে তাঁকে নিরাপদে রাখার দাবি করেছে ভারত। বন্দি পাইলট অভিনন্দনের বন্দি, রক্তাক্ত ছবি দেখে উদ্বেগে দেশের মানুষ।
কী এই জেনেভা কনভেনশন?
যুদ্ধবন্দিদের অধিকার সুরক্ষিত করতে জেনেভা কনভেনশনের একাধিক নিয়ম রয়েছে। জেনেভা কনভেনশনে চারটি সন্ধি (ট্রিটি) এবং তিনটি অতিরিক্ত প্রোটোকল রয়েছে, যার উদ্দেশ্য যুদ্ধ চলাকালীন মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মানবতা বজায় রাখতে প্রথম সন্ধি চুক্তি হয় ১৮৬৪ সালে। এরপর ১৯০৬ সাল ও ১৯২৯ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সন্ধি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে ১৯৪ টি দেশ মিলে চতুর্থ সন্ধি চুক্তি করে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেড ক্রশের বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালীন গ্রেফতার হওয়া সৈনিক ও আহত মানুষদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হবে তার দিশা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেনেভা কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে। তাতে যুদ্ধবন্দিদের অধিকার সম্বন্ধে স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া আছে। পাশাপাশি বলা আছে, যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের দেখভাল ও সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথাও। জেনেভা কনভেনশনের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে যুদ্ধে আহত যুদ্ধবন্দিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার কথাও স্পষ্ট বলা হয়েছে।
জেনেভা কনভেনশনের মূল নির্যাসঃ
ক. জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধে আহত সৈনিকদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও দেখভালের ব্যবস্থা করতে হবে
খ. যুদ্ধবন্দিদের খাবার, জল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে হবে
গ. এই সন্ধি অনুযায়ী, কোনও যুদ্ধবন্দির সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা যায় না
ঘ. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যখনই সৈনিক অপর পক্ষের হাতে ধরা পড়ছে, সেই মুহূর্ত থেকেই ধৃত, জেনেভা কনভেনশন মোতাবেক সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন
ঙ. কনভেনশনের মতে যুদ্ধবন্দিকে ভয় দেখানো কিংবা হুমকি দেওয়া যায় না
চ. যুদ্ধবন্দিকে জাতি, ধর্ম, জন্মস্থান ইত্যাদি প্রশ্ন করা যায় না
কীভাবে এল জেনেভা কনভেনশন?
সালটা ১৮৫৯। সোলফেরিনোর যুদ্ধে (ব্যাটল অফ সোলফেরিনো) আহত সৈনিকদের দেখতে গিয়েছেন সুইস ব্যবসায়ী হেনরি ডুনান্ট। কিন্তু অবস্থা দেখে চোখে জল হেনরির। চারদিকে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। চিকিৎসা তো দূর অস্ত, আহতদের সেবা-সুশ্রুষার চিহ্ন নেই, বরং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আহতদের আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। এই অভিজ্ঞতা নাড়িয়ে দিয়েছিল হেনরি ডুনান্টকে। তারপরই তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘এ মেমরি অফ সোলফেরিনো’। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধবন্দিদের ন্যূনতম অধিকার সুনিশ্চিত করতে শুরু করেন দৌত্য। ১৮৬৪ সালের ২২ শে অগাস্ট জেনেভায় কূটনৈতিক সমাবেশ উপলক্ষ্যে সুইৎজারল্যান্ড সরকার ইউরোপের সবকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানায়। ডাকা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোকেও। মোট ১৬টি দেশ ২৬ প্রতিনিধিকে পাঠায় ওই সমাবেশে। সেদিনই প্রথম জেনেভা কনভেনশন গৃহীত হয়। ১৯০১ সালে এর জন্য প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় হেনরি ডুনান্টকে।
Comments are closed.