কেন্দ্রের চাপে শেষ পর্যন্ত ভারতে নিজেদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখাশোনার জন্য পৃথক একটি টিম গঠনের কথা ঘোষণা করল বিশ্বের জনপ্রিয়তম অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। নিজেদের সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়া বাদে এই প্রথম পৃথকভাবে কোনও নির্দিষ্ট দেশের জন্য আলাদা টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিল ফেসবুকের আওতাধীন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। এবং এই টিমের প্রধান করা হচ্ছে অভিজিৎ বোসকে। বুধবার এক বিবৃতি মারফত হোয়াটসঅ্যাপের তরফে একথা জানানো হয়েছে।
কে এই অভিজিৎ বোস?
ভারতের মোবাইল পেমেন্ট ফার্ম ‘ইজিট্যাপ’এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হলেন অভিজিৎ। তাঁকেই হোয়াটসঅ্যাপ ইন্ডিয়ার প্রধান বা কান্ট্রি হেডের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় পা রাখতে আগ্রহী এই মেসেজিং অ্যাপটি। তাই কান্ট্রি হেডের পদে অভিজিতের মতো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অভিজিৎকেই তারা বেছে নিলেন। এদিন এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপের সিইও ম্যাট ইডেমা জানিয়েছেন, একজন সফল এন্টারপ্রেনোর হিসাবে অভিজিৎ ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবসা বৃদ্ধিতে যোগ্য অবদান রাখবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।
বিশ্বের কোনও দেশে না থাকলেও কেন ভারতে নিজেদের কাজকর্মের জন্য আলাদা টিম ও দফতর গঠনের প্রয়োজন হল হোয়াটসঅ্যাপের?
এর মূলে আছে কেন্দ্রের কিছু নির্দেশ ও কড়া অবস্থান। গত কয়েক মাস ধরেই দেশে গুজবের জেরে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের মতে এর পেছনে রয়েছে মূলত হোয়াটসঅ্যাপের মত কিছু অ্যাপ ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম। এগুলির মাধ্যমেই গুজব ছড়ানো হয় এবং সত্য-মিথ্যে যাচাই না করে মানুষ উত্তেজিত হয়ে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এবছরের জুন, জুলাই, অগাস্ট মাস নাগাদ এরকম গুজব ও তার জেরে গণপিটুনিতে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রায় জনা দশেক মানুষের মৃত্যু হয়। এরপরই কড়া অবস্থান নেয় কেন্দ্র। প্রায় দু মাস আগে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ হোয়াটস অ্যাপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস ড্যানিয়েলস এর সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন, গুজব ছড়ানো বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি বলা হয়, ভারতে ব্যবসা করতে হলে ভারতের আইন মেনে চলতে হবে। ভারতে আলাদা গ্রিভেন্স সেল তৈরি করতে হবে, এবং ভারতের কাজকর্মের জন্য এবং প্রয়োজনে সরাসরি কথা বলার জন্য এখানে নিজেদের আলাদা টিম ও দফতর তৈরি করতে হবে হোয়াটসঅ্যাপকে। কথায় কথায় কোনও অভিযোগ উঠলে ক্যালিফোর্নিয়ায় যোগাযোগের বাহানা চলবে না।
এরপরই কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে ভারতে অগাস্ট মাসে পৃথক গ্রিভেন্স সেল ও অফিসার নিয়োগ করে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। এদিন ঘোষণা করা হল হোয়াটসঅ্যাপ ইন্ডিয়ার প্রধানের নাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রের সঙ্গে বিবাদের জেরে ভারতের মতো বিশাল ও সম্ভাব্য লাভজনক বাজার হারাতে চায়নি হোয়াটসঅ্যাপ। ভারতে ২০ কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী আছেন। তাই কেন্দ্রের সব নির্দেশই প্রায় মেনে নিল তারা। আর অভিজিৎ বোসের মত ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে এদেশে কান্ট্রি হেড করে হোয়াটসঅ্যাপ আসলে ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের লোভনীয় বাজার ধরতে চাইছে বলেই অনেকে মনে করছেন। আগামী বছরের প্রথমেই দায়িত্ব নেবেন অভিজিৎ, এমনটাই জানা গেছে।
Comments are closed.