কে হবেন সিবিআইয়ের পরবর্তী ডিরেক্টর? ভোটের বঙ্গে তুঙ্গে জল্পনা
বাজেট অধিবেশন এবং কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষোভের জেরে নয়া ডিরেক্টর বেছে নিতে দেরি হতে পারে
রাত পোহালেই মেয়াদ শেষ সিবিআইয়ের বর্তমান ডিরেক্টর ঋষিকুমার শুক্লার। পরবর্তী সিবিআই ডিরেক্টর বেছে নেবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তবে বাজেট অধিবেশন এবং কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষোভের জেরে নয়া ডিরেক্টর বেছে নিতে দেরি হতে পারে বলে খবর।
বাংলা সহ একাধিক রাজ্যে ভোটের আবহে এই পদ কে পাবেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের সেরা তদন্তকারী সংস্থার প্রধান কে হবেন তা ইদানীং রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাই ভোটের মুখে সিবিআই প্রধানের পদ কে পাচ্ছেন তার দিকে তাকিয়ে ডান-বাম দুই পক্ষই। রাজনৈতিক মহল বলছে, তার উপরেই নির্ভর করছে কোন তদন্ত কতটা অগ্রাধিকার পাবে। সিবিআই অধিকর্তার পদের রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে সিনিওরিটি ও দক্ষতার বিচারে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ৪ টি ব্যাচের IPS অফিসারের তালিকা পাঠানো হবে। তার মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেবে মোদী-অধীর-বোবডের কমিটি।
আর এখানেই উঠছে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন, সিবিআই প্রধান পদে কে আসবেন। কেন্দ্রের তরফে বিষয়টি নিয়ে রা কাড়েননি কেউ। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে অন্তত ২৫-২৬ জন IPS আছেন প্রাথমিক বাছাইয়ের তালিকায়। পদ্ধতি হল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) পার্সোনেল ও ট্রেনিং বিভাগের (DoPT) সহায়তায় প্রাথমিক তালিকা তৈরি করবে। পরামর্শ নেওয়া হবে চিফ ভিজিলেন্স কমিশন (CVC) এর। সেই তালিকা পাঠানো হবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে।
নয়া সিবিআই ডিরেক্টর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ১৯৮৪ ব্যাচের অসম-মেঘালয় ক্যাডার ওয়াই সি মোদী। তিনি বর্তমানে NIA এর ডিজি পদে রয়েছেন। বর্তমানে বিএসএফের ডিজি ১৯৮৪ ব্যাচের গুজরাত ক্যাডারের রাকেশ আস্থানাও রয়েছেন দৌড়ে। এছাড়া ১৯৮৫ ব্যাচের মহারাষ্ট্র ক্যাডার বর্তমানে CISF এর ডিজি সুবোধকুমার জয়সওয়াল, ১৯৮৫ ব্যাচের ইউপি ক্যাডার এইচ সি অবস্থি, তিনি এখন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজিপি। দৌড়ে আছেন ১৯৮৪ ব্যাচের হরিয়ানা ক্যাডারের অফিসার এস এস দেসওয়াল এবং ১৯৮৫ সালের কেরল ক্যাডার লোকনাথ বেহেরা। বেহেরা বর্তমানে রয়েছেন কেরলের ডিজিপি পদে।
এই নাম নিয়েই এবার রাজনীতির আঙ্গিনায় তোলপাড় হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। আস্থানার সঙ্গে তৎকালীন ডিরেক্টর অলক ভার্মার গোলমাল সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়। তারপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। বর্তমানে আস্থানা বিএসএফের ডিজি। তাঁর বাহিনীর লোকের নাম জড়িয়েছে গরু পাচারে। আস্থানা সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত অফিসারদের বরখাস্ত করেছেন। IPS মহলের অন্দরের খবর, অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করাই আস্থানার ট্রেডমার্ক। বর্তমানে সিবিআইয়ের দুটি সবচেয়ে হাইভোল্টেজ মামলা সারদা এবং নারদের তদন্তও সবচেয়ে গতি পেয়েছিল এই আস্থানার আমলেই। লালুপ্রসাদের জেলযাত্রার পিছনেও আস্থানার তদন্তের বড়ো ভূমিকা আছে। আবার কেরল ক্যাডারের লোকনাথ বেহেরা একসময় সিবিআইয়ে ছিলেন। গ্রাহাম স্টেইন্স হত্যা বা পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ মামলার মতো হাইপ্রোফাইল মামলার তদন্তে তিনি যুক্ত ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হল, সিবিআইয়ের পরবর্তী অধিকর্তা কে হবেন। বাংলায় ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল মনে করছে আস্থানার সুযোগ আছে। আবার দক্ষিণের কেরল এবং তামিলনাড়ুর ভোটের দিকে তাকিয়ে অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন লোকনাথ বেহেরা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও প্রধান বিচারপতির হাই পাওয়ার্ড কমিটি। সেই কমিটি যাঁকে বেছে নেবে তিনি ২ বছরের মেয়াদে অধিকর্তার পদ সামলাবেন। বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার সেই পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে।
Comments are closed.