একুশের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবি হলেও তিনি জেলা সভাপতি থাকাকালীন আলিপুরদুয়ারের পাঁচটা বিধানসভা আসনেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। তবুও বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই জেলার অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। একই সঙ্গে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির জেলা কমিটির আট সদস্যও তৃণমূলে যোগ দেন।
উত্তরবঙ্গের হেভিওয়েট এই রাজনীতিক দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ আরএসএস এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি তাঁকে আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি করে। একুশের তুমুল সবুজ ঝড়ের মধ্যেও আলিপুরদুয়ারের বিজেপির পাঁচটি আসনেই জয়ের নেপথ্যে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন। তবে বিধানসভা ভোটের আগেই তাঁর সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়। সোমবার তৃণমূলে যোগ দিয়ে নিজেও একথা জানিয়েছেন গঙ্গাপ্রসাদ।
বিধানসভা ভোটের আগে আলিপুরদুয়ার বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীর নাম প্রকাশ্যে আসার পরেই বেঁকে বসেছিলেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন, অশোক লাহিড়ীকে তিনি চেনেন না। একই ভাবে আপত্তি তোলেন প্রাক্তন গোর্খা জনমুক্তি নেতা বিশাল লামার প্রার্থী পদ নিয়েও। বিশাল লামা কালচিনি কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে ভোট দাঁড়ান।
গঙ্গাপ্রসাদের মানভঞ্জন করতে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু ছুটে যান আলিপুরদুয়ারে।
সায়ন্তনের সঙ্গে বৈঠক করে এসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাজ্য নেতৃত্বের ধমক খেয়েছি ঠিক হয়ে গিয়েছি। মূলত তাঁর বিক্ষোভের জেরেই অশোক লাহিড়িকে আলিপুরদুয়ার থেকে সরায় গেরুয়া শিবির। তবে পরিস্থিতি যে ঠিক হয়নি এদিন গঙ্গাপ্রসাদের তৃণমূলে যোগ দেওয়াতেই স্পষ্ট।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে নিজের পুরোনো দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই নেতা। বলেন, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেন না কেন্দ্রের নেতারা। তাঁর দাবি, একের এক নেতাকে দিল্লি-কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছেন বাইরের নেতারা। জেলার সংগঠনকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ গঙ্গাপ্রসাদের। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, ভোটের আগেই দল ছাড়তে পারতেন, কিন্তু তখন দল বদলালে লোকে গদ্দার বলত। তাঁর কথায়, নিজের জেলায় দলকে জিতিয়েই বিজেপি ছাড়লাম।
এবার প্রশ্ন উঠছে আলিপুরদুয়ারের ৫ বিধায়ক কী করবেন? আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষের সুর উত্তরে। এই প্রেক্ষিতে সেই আলিপুরদুয়ার জেলার বিজেপি সভাপতির তৃণমূলে যোগদান এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দেবে কি? প্রশ্ন এখন সেটাই।
Comments are closed.