২১ জুন, রবিবার সূর্যগ্রহণের পর করোনা কমবে বলে কেন দাবি করলেন চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানী? কলকাতা সহ কোন-কোন জায়গা থেকে তা দেখা যাবে?
২০২০ সালের প্রথম সূর্যগ্রহণ হতে চলেছে ২১ জুন, রবিবার। এর আগে শেষ বার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে।এই বছরের গ্রহণের বিশেষ তাৎপর্য হল, এই ২১ জুন তারিখে দিন সবচেয়ে বড় হয়।
তবে এটি পূর্ণগ্রহণ নয়, একে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ যা ভারতের আকাশেও দেখা যাবে রবিবার৷ সূর্যকে ঢেকে দেবে চাঁদ এবং বার্ষিক এই গ্রহণে পুরো অন্ধকার হবে না৷ তবে তৈরি হবে আগুনের আংটি! ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যাবে এই গ্রহণ৷
রবিবার কখন গ্রহণ?
রবিবার সকাল ১০ থেকে শুরু হবে এই গ্রহণ যা চলবে ১১.৫০ মিনিট পর্যন্ত এবং সেই সময় প্রায় গোটা সূর্য ঢেকে যাবে চাঁদের ছায়ায়৷ ১ মিনিটের কিছুটা বেশি সময় এই গ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে৷ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রহণ চাক্ষুষ করা গেলেও রাজস্থান, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ড থেকে খুব স্পষ্ট দেখা যাবে৷ কলকাতা থেকেও সূর্যগ্রহণের দেখা মিলবে৷ তবে খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখতে বারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷
গ্রহণ শুরু হওয়ার সময় সকাল ৯ টা ১২ মিনিট, প্রথম পূর্ণ গ্রহণ শুরু হবে ১০ টা ১৭ মিনিট থেকে। আর পুরোপুরি সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে দুপুর ১২ টা ১০ মিনিট থেকে। দুপুর ২.০২ মিনিট পর্যন্ত থাকবে গ্রহণ, কাটবে দুপুর ৩ টে ৪ মিনিটে।
কোথায় কোথায় দেখা যাবে গ্রহণ
ভারত ছাড়াও এই সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে আফ্রিকা মহাদেশে৷ মধ্য আফ্রিকা রিপাবলিক, কঙ্গো, ইথিওপিয়াতে গ্রহণ দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়া পাকিস্তান ও চিন থেকেও গ্রহণ দেখা যাবে৷ উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে। এছাড়া এশিয়ার আরও অন্যান্য দেশ, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু অংশ থেকেও ২১ জুনের বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে।
এই গ্রহণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই গ্রহণে চাঁদের ছায়া সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে গ্রাস করতে পারে না। বলয়গ্রাস গ্রহণে অমাবস্যার চাঁদ সূর্যকে মাঝখান থেকে ঢেকে ফেলে। তাই তখন পাশ থেকে আলোর মালা প্রতিভাত হয়। যা ‘ring of fire’ নামে পরিচিত। এই সময় চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য প্রায় সরলরেখায় অবস্থান করে।
তবে এই ‘রিং অফ ফায়ার’ বা আগুনে আংটি দেখা যাবে কয়েকটি জায়গা থেকে৷ চাঁদের ছায়া সূর্যকে প্রায় পুরোপুরি ঢেকে দেবে৷ সূর্যের মাঝখানের অংশ ঢেকে গিয়ে আংটির মত চেহারা নেবে৷ সূর্যের সর্বোচ্চ ৯৯.৪ শতাংশ ঢেকে দেবে চাঁদের ছায়া৷ ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন৷ উত্তরায়ণের দিনই সূর্যগ্রহণ হচ্ছে৷ ১৯৩৮ সালের পর ২০২০ সালে ফের উত্তরায়ণে সূর্যগ্রহণের সাক্ষী থাকবে বিশ্ব৷
ইংরেজিতে এই গ্রহণ পরিচিত annular solar eclipse নামে।
খালি চোখে গ্রহণ দেখা নয়
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এই সময় সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকানো উচিত নয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, যদি গ্রহণে ৯৯ শতাংশ সূর্যকেও চাঁদ ঢেকে ফেলে, তাতেও অবশিষ্ট রশ্মি চোখের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট। তাই তেজস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে সঠিক অপটিক্যাল ঘণত্ব আছে এমন সোলার ফিল্টার দিয়ে গ্রহণ দেখা যেতে পারে। যথাযথ স্থূলত্বের অ্যালুমিনিয়াম মিলার ফিল্ম এবং কালো পলিমারও নিরাপদ। গ্রহণ দেখার বিশেষ গগলস পরতে পারেন।
পেরিস্কোপে, টেলিস্কোপ বা দূরবীন- কোনও কিছুর সাহায্যে গ্রহণ দেখার সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে। গ্রহণের সময় সূর্য রশ্মি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে যা চোখে প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে সানগ্লাস বা ঘষা কাঁচ দিয়েও গ্রহণ দেখতে বারণ করেছে নাসা। বাজারে আইএসও স্বীকৃত বিশেষ সোলার গ্লাস দিয়ে একমাত্র এই গ্রহণ দেখা নিরাপদ। সে সব গ্লাস ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহার নির্দেশিকা পরে নিতে উপদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনও ভাবে সেই গ্লাস ভাঙা বা দাগ থাকলে ব্যবহার করতে না বলছেন তাঁরা।
করোনাভাইরাস ও সূর্যগ্রহণ
এসবের মধ্যে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের এক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হওয়া সূর্য গ্রহণের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগ রয়েছে। কে এল সুন্দরকৃষ্ণ নামে ওই বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সূর্যগ্রহণের সময় তৈরি হওয়া উত্তাপের ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় করোনা ভাইরাসের জন্ম হয়েছে। তাঁর মত, সূর্যগ্রহণের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তির সরাসরি যোগ রয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই বিজ্ঞানী বলছেন, বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকের অংশ থেকে এই ভাইরাস পৃথিবীতে নেমে এসেছে। বায়ো নিউক্লিয়ার ইন্টারঅ্যাকশন এর ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই ২১ জুন থেকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এই ভাইরাস প্রাকৃতিক ভাবেই নির্মূল হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গ্রহণ ও কুসংস্কার
মহাজাগতিক এই বিষয়গুলির সঙ্গে নানা ধরনের কুসংস্থার যুক্ত থাকে৷ যেমন গ্রহণের সময় রান্না না করা বা না খাওয়া ইত্যাদি। তবে আসল কারণ হল, সূর্যের রশ্মিতে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো ধূলিকণা বা জীবাণুর মৃত্যু হয়৷ ফলে সূর্যের তাপ যখন কমবে তাতে কিছুটা প্রভাব পড়বে৷ সে কারণে খেতে বা রান্না করতে নিষেধ করা হয়৷ তার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারী৷ অনেকেই তাই গ্রহণের জন্য বেশি সতর্ক থাকছেন।
Comments are closed.