করোনার প্রভাবে ৫.২% হারে সঙ্কুচিত হবে বিশ্ব অর্থনীতি, ভারতে অর্থনীতির সঙ্কোচন ৩.২%, জানাচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফের অতি ভয়ঙ্কর মন্দা আসতে চলেছে দুনিয়ায়, অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কবার্তা বিশ্ব ব্যাঙ্ক (World Bank)-এর। সোমবার বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্লোবাল ইকনমি প্রসপেক্ট রিপোর্টে প্রকাশ, চলতি অর্থবর্ষে বিশ্ব অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৫.২ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে পারে। আর ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে ৩.২ শতাংশ।

অতিমারি করোনার দাপটে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাণ হারিয়েছেন ৪ লক্ষের বেশি মানুষ, সংক্রমিত হয়েছেন ৭০ লক্ষেরও বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে লকডাউনের ফলে প্রভূত অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিশ্ব অর্থনীতি। এই প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্ট রিপোর্টে জানাচ্ছেন, ১৮৭০ সালের পর ফের বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে কেবল এক অতিমারি-র (প্যান্ডেমিক) ফলে।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ১৮৭০ সালের পর মোট ১৪ টি মন্দা দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু গত ১৫০ বছরের ইতিহাসে চতুর্থবার মহামন্দা গ্রাস করতে চলেছে সারা বিশ্বকে। ১৯১৪, ১৯৩০-৩২, ১৯৪৫-৪৬ সালের পর আবার ঘোর সঙ্কটে বিশ্ব অর্থনীতি, জানাচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিইলা পাজারবাজিওগ্লু বলেন, ১৮৭০ সালের পর এই প্রথম মহামারির কারণে গভীর মন্দায় চলে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। তাঁর কথায়, যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। মাথা পিছু আয় কমে যাওয়ায় ৭ থেকে ১০ কোটি মানুষের অতি দরিদ্র হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলির অর্থনীতি ৭ থেকে ৯.১ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলির ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা প্রবল। উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির সংকোচন হতে পারে ২.৫ শতাংশ হারে। আরও বলা হচ্ছে, উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি (EMDE) চলতি বছরে ২.৫ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে পারে। যা গত ৬০ বছরের মধ্যে প্রথম। বিশ্ব ব্যাঙ্কের আরও পূর্বাভাস, সারা বিশ্বে গড়ে মাথাপিছু আয় ৩.৬ শতাংশ হারে হ্রাস পেতে পারে যা, এই বছরই লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে। বলা হয়েছে, যে সব দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল, যারা বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল, এবং বৈদেশিক বাণিজ্য, রফতানি ও পর্যটনের উপরে যেখানে অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই দেশগুলিতে মন্দার ধাক্কা সবথেকে বেশি হতে যাচ্ছে। অতিমারির ধাক্কা অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন হলেও এর ধাক্কা প্রায় সবদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পড়তে চলেছে। যা স্তিমিত করতে পারে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

তবে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতে, ঘুরে দাঁড়াতেও বেশি সময় নেবে না উন্নয়নশীল দেশগুলি। ২০২১ সালে ফের বৃদ্ধির পথে হাঁটার আশা রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির। বৃদ্ধির হার তখন ৪.২ শতাংশ হতে পারে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট মালপাসের কথায়, এই অবস্থা থেকে ফেরার গতি ও শক্তি নির্ভর করছে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কার্যকারিতার উপর। নতুন পরিবেশে তারা কীভাবে নীতি নির্ধারণ করতে পারেন তার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।

Comments are closed.