ভারতে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন ৬০% মানুষই, TheWire কে দেওয়া ইন্টারভিউয়ে আশঙ্কা প্রকাশ মার্কিন চিকিৎসক লক্ষ্মীনারায়ণের
করোনাভাইরাসের প্রভাব তীব্র হতে পারে ভারতে, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। ভারতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে মহা আতঙ্কের পূর্বাভাস দিলেন ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি-র ডিরেক্টর ডাঃ রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ।
ইংরেজি নিউজ পোর্টাল ‘The Wire’ এ দেওয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমেরিকার জনসংখ্যার ২০ থেকে ৬০ শতাংশ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারে। আর ভারতে এই সংখ্যাটা দাঁড়াতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কোটি! ভারতের ৬০ শতাংশ মানুষ করোনার কবলে পড়তে পারেন বলে করণ থাপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ। পাশাপাশি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) যে দাবি করেছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে এখন ভারত স্টেজ টু- এ রয়েছে, তাও খারিজ করে দিয়েছেন ডাঃ লক্ষ্মীনারায়ণ। তাঁর দাবি, ভারত যদি প্রকৃতই এই মহামারির স্টেজ টু-তে থাকত, তা হলে সরকার দেশজুড়ে স্কুল, কলেজ, থিয়েটার, সিনেমা হল বন্ধ করে দিত না। সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টরের দৃঢ় মত, ভারত এখন মহামারির স্টেজ থ্রি তে রয়েছে। এবং সেটা কেন্দ্রীয় সরকার ভালোভাবেই জানে। কিন্তু প্রকাশ্যে স্বীকার করছে না।
ডাঃ লক্ষ্মীনারায়ণ সাক্ষাৎকারে জানান, ভারতের বিপুল জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশই করোনারভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন এই মারণ ভাইরাসে। তাঁদের সবার উপর একই প্রভাব না পড়লেও একটা ছোট অংশ প্রবলভাবে আক্রান্ত হতে পারেন এই ভাইরাসে এবং দুর্ভাগ্যক্রমে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে ভারতে।
‘The Wire’ এ প্রায় ৫০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারে ডাঃ লক্ষীনারায়ণ জানান, গত বুধবার কেন্দ্রের তরফে ১৩০ জন করোনা আক্রান্ত, তিন জনের মৃত্যু এবং ১৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক নয়। কোনও মতেই ভারতে এই সামান্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন না বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ব্রিটেন মেনে নিয়েছে বেশ কয়েকজন আক্রান্তকে তারা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। ভারতেও শনাক্ত করতে না পারা রোগীর সংখ্যা প্রায় ১,৫০০। ডাঃ লক্ষীনারায়ণ বলেন, ভারতের আয়তন ও জনসংখ্যা মাথায় রাখলে অন্তত ১০ হাজার করোনা আনডিটেক্টেড কেস থাকতে বাধ্য।
এই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, করোনা টেস্ট আরও দ্রুত করতে হবে। দিনে ১০ হাজার মানুষের রক্ত, লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার। যেখানে ১৭ মার্চ পর্যন্ত আইসিএমআর বলছে, সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৫০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ডাঃ লক্ষ্মীনারায়ণ বলছেন, ভারতের ৪০ থেকে ৮০ লক্ষ মানুষকে আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করার প্রয়োজন আছে। তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সরকারের। করোনা নিয়ে এটাই ভারত সরকারের প্রতি তাঁর পরামর্শ বলে জানান তিনি।
ডাঃ লক্ষ্মীনারায়ণের পরামর্শ, ঠান্ডা লাগলে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে অন্তত সাতদিন বাড়িতে থাকুন। চারদিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তড়িঘড়ি করে করোনা টেস্টের প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি কোনও ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলে বাড়ির সদস্যদের ভয় পেতে বারণ করছেন তিনি। ওই ব্যক্তিকে দু’ফুট দূরত্ব থেকে খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁর এঁটো থালা-বাসন, জামাকাপড় কাচতে কোনও সমস্যা নেই। শুধু ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে দিনে চার থেকে পাঁচবার হাত ধুতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে করোনার হাত থেকে বাঁচতে সবার মাস্ক পরার কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানান ডাঃ লক্ষ্মীনারায়ণ। তিনি বলেন, যারা সংক্রামিত নন, তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করা নিষ্প্রয়োজন। সবাই মাস্ক ব্যবহার করায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে টানাটানি পড়ছে।
গোমূত্র পান বা গোবরে স্নান করে করোনা দূর করা যাবে বলে যে দাবি উঠেছে তা অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাস ঠেকাতে কেন্দ্রের তরফে যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে, তারও কোনও ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডাঃ রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ।
Comments are closed.