সামনে ২১’এর বিধানসভা ভোট। তার আগে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস ছেড়ে ৯ বিধায়ক শনিবার যোগ দিলেন বিজেপিতে। এই ন’জন বর্তমান বিধায়কের মধ্যে ছ’জন আবার তৃণমূলের। এঁরা হলেন, বনশ্রী মাইতি (উত্তর কাঁথি), সৈকত পাঁজা (মন্তেশ্বর), বিশ্বজিৎ কুণ্ডু (কালনা), শীলভদ্র দত্ত (বারাকপুর), দিপালী বিশ্বাস (গাজোল) ও
সুকরা মুন্ডা (নাগরাকাটা)।
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছেন তাপসী মণ্ডল (হলদিয়া), সুদীপ মুখার্জি (পুরুলিয়া) ও অশোক দিন্দা (তমলুক)।
দলত্যাগী এই ৯ বিধায়কের নিজের কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে কী রেজাল্ট ছিল? আসন্ন বিধানসভা ভোটে পুরনো দলের টিকিটে দাঁড়ালে এঁদের জেতার সম্ভাবনা কেমন হত? দেখে নিন এই বিধায়কদের কেন্দ্রে লোকসভা ভোটের ফল কেমন ছিল-
১. বনশ্রী মাইতি:
২০১১ সাল থেকে কাঁথি উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। ‘১৯ এর লোকসভা ভোটে কী ফলাফল ছিল তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে?
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্তকে এক লক্ষের বেশি ভোটে হারিয়ে জয়ী হন শুভেন্দুর বাবা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শিশির অধিকারী। আর বনশ্রীর বিধানসভা কেন্দ্র কাঁথি উত্তর থেকে তিনি পান ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩ টি ভোট। কিন্তু ওই কেন্দ্রে মোটেই পিছিয়ে ছিলেন না বিজেপি প্রার্থীও। হাড্ডাহাড্ডি লড়ে ওই কেন্দ্র থেকে দেবাশিসবাবু পেয়েছিলেন ৯১ হাজার ৯৫৯ টি ভোট।
২. শীলভদ্র দত্ত:
বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপির অর্জুন সিংহ। তৃণমূলত্যাগী বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত নিজের বিধানসভা কেন্দ্র রক্ষা করতে পারেননি। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অর্জুন পেয়েছিলেন ৬৪ হাজার ৪৬ টি ভোট। আর তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীর প্রাপ্ত ভোট ৬০ হাজার ৫৫৭ টি।
৩. সৈকত পাঁজা:
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন মন্তেশ্বরের বিধায়ক সজল পাঁজা। সেই আসনেই ‘১৬ সালে তৃণমূলের বিধায়ক হন তাঁর বড় ছেলে সৈকত পাঁজা। গত লোকসভা ভোটে কী হাল ছিল তাঁর বিধানসভা আসনে?
গত লোকসভা ভোটে বর্ধমান- দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপির এসএস আলুওয়ালিয়ার কাছে হেরে যান তৃণমূলের মমতাজ সংঘমিতা। কিন্তু এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা মন্তেশর থেকে আলুওয়ালিয়া পিছিয়ে ছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ১৬৬ টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৯৫ হাজার ২০২ টি ভোট। অর্থাৎ, নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের মুখরক্ষাটুকু করেছিলেন সৈকত। তবে বিধানসভা ভোটের তুলনায় ভোটের মার্জিন অনেকটাই নীচে ছিল।
৪. বিশ্বজিৎ কুণ্ডু:
‘১৯ লোকসভা ভোটে পূর্ব বর্ধমান কেন্দ্র থেকে জয়ী তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের সঙ্গে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও শনিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
লোকসভা ভোটে সুনীল জয় পেলেও বিশ্বজিতের কালনা কেন্দ্রে তাঁকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছিল বিজেপির পরেশচন্দ্র দাসের সঙ্গে। কালনা কেন্দ্র থেকে তিনি পেয়েছিলেন ৮২ হাজার ৭২৪ টি ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে সুনীল পান ৮৬ হাজার ৩৫৭ টি ভোট।
৫. সুকরা মুণ্ডা:
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গ জুড়ে কার্যত গেরুয়া ঝড় চলেছে। রেহাই পায়নি তৃণমূল বিধায়ক সুকরা মুণ্ডার নাগরাকাটার বিধানসভাও। ওই কেন্দ্রে বিজেপির জন বাড়লা পান ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮৬৫ টি ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে যিনি শনিবার গেরুয়া শিবিরে চলে এলেন তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল মোটে ৫৩ হাজার ৮৫৯টি।
৬. দিপালী বিশ্বাস:
মালদা গাজোলের বিধায়ক দিপালীর কেন্দ্রে লোকসভা ভোটের রেজাল্ট কেমন ছিল?
২০১৬ সালে সিপিএম- কংগ্রেস জোটের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে ওই বিধানসভায় জেতেন দিপালী বিশ্বাস। এর কয়েক মাস পরই দিপালী তৃণমূলে যোগ দেন। ‘১৯ লোকসভা ভোটে মালদা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মুর কাছে হেরে যান কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী ও তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নূর। গাজোল বিধানসভা কেন্দ্রে খগেন মুর্মু পান ১ লক্ষ ৮ হাজার ৩৫১ টি ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থী মৌসম পেয়েছিলেন মাত্র ৬৭ হাজার ১৮০ টি ভোট।
৭. তাপসী মণ্ডল:
হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল এবার লাল ঝাণ্ডা ছেড়ে বিজেপিতে এলেন। ‘১৯ লোকসভা ভোটে তাঁর কেন্দ্রে বাম প্রার্থীর অবস্থা কেমন ছিল? ওই কেন্দ্রে সেখ ইব্রাহিম আলি পেয়েছিলেন মাত্র ১৮ হাজার ৩৫৫ টি ভোট। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট ছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৯৬ টি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৬১ হাজার ৪৭৫ ভোট।
৮. অশোক দিন্দা:
তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা। তমলুক লোকসভা আসনে তাঁর কেন্দ্রে কী ফলাফল ছিল ১৯’ এর ভোটে?
তমলুক কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তৃণমূলের দিব্যেন্দু অধিকারী। আবার ওই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে শুভেন্দুর ভাই পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৫৮০ ভোট। বিজেপির সিদ্ধার্থশঙ্কর নস্কর পান ৭২ হাজার ১৩২ টি ভোট। আর বাম প্রার্থী ইব্রাহিম আলির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ২১ হাজার ৫৪ টি।
৯. সুদীপ মুখার্জি:
পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখার্জি। ‘১৯ এর ভোটে তাঁর কেন্দ্রে কেমন ফল ছিল কংগ্রেসের? বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, তৃণমূলের মৃগাঙ্ক মাহাতোর প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে নিছকই কম সংখ্যক ভোট (৮,৮৯২) ভোট পান কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো।
সব মিলিয়ে যা দেখা যাচ্ছে সদ্য দলত্যাগী ও বিজেপিতে যোগ দেওয়া এই নয় বিধায়কের মধ্যে ছয় জনই লোকসভা ভোটে নিজেদের কেন্দ্র বাঁচাতে পারেননি। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেও কি বিজেপির নৌকায় ঝাঁপ দিলেন এঁরা? উঠছে প্রশ্ন।
Comments are closed.