প্রথম জেলবন্দি হিসেবে নেট পরীক্ষা দিলেন মাওবাদী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দীপক কুমার। সল্টলেকের গীতবিতানে পরীক্ষার সিট পড়েছিল দীপকের। মঙ্গলবার দুপুর ২ টোর কিছুক্ষণ আগেই পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে নেট পরীক্ষা দিতে ঢোকেন তিনি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে যেভাবে দীপক কুমার নেট পরীক্ষা দিলেন, তাতেই সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেন তাঁর বন্ধুরা।
পিএইচডি করার বা অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা নেট অর্থাৎ NATIONAL ELIGIBILTY TEST। দমদম জেলের রাজনৈতিক বন্দি দীপক কুমারই প্রথম জেলবন্দি যিনি নেট পরীক্ষা দিলেন। দীপকের বিষয় সমাজতত্ত্ব। প্রসঙ্গত, গতবার এই কেন্দ্রেই সিট পড়েছিল মাওবাদী অভিযোগে ধৃত আরও এক জেলবন্দি অর্ণব দামের। যদিও শেষপর্যন্ত অর্ণব NET পরীক্ষা দিতে পারেননি। অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে দেরি করে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ঢুকতে দিতে অস্বীকার করে। এবারও বহু সমস্যা পেরিয়ে দীপককুমার পরীক্ষার ফর্ম ভরতে পেরেছেন। এদিকে নেটে বসার সুযোগ না পেলেও ইতিহাস গড়ে অর্ণব দাম জেলে বসেই সেট পাশ করেছেন। জামিনে মুক্ত হয়ে পিএইচডি করার প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে।
ছত্রিশগড়ের দূর্গ জেলার বাসিন্দা, ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের প্রাক্তন কর্মী, দীপক কুমারকে ২০১২ সালে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, মাওবাদীদের অস্ত্র সরবরাহের। এনআইএ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে। দীপক কুমার গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর আইনজীবী স্ত্রী, রেখা পরগনিয়াকে ছত্তিশগড় পুলিশ মাওবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলেই ঠাঁই হয় দীপক কুমারের। অভিযোগ, জেল আধিকারিকদের অঙ্গুলি হেলনে হিন্দি সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক দীপক কুমারের কাছে বইয়ের যোগান ক্রমেই কমতে থাকে। অতীতে গ্র্যাজুয়েশন এবং এলএলবি পাশ করেছিলেন দীপক। তারপর জেলে বসে ইগনু থেকে সোশিওলজিতে স্নাতকোত্তর করেন দীপক কুমার। বর্তমানে হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ করছেন। গতবারও নেট পরীক্ষায় বসতে চেয়েছিলেন দীপক। আদালত সেই অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু সেই অনুমতি জেলে পৌঁছতে এত সময় লেগে যায় যে ফর্ম ফিল আপ করার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। দীপক কুমার হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। দীপকের ভাই ছত্তিসগঢ় থেকে প্রয়োজনীয় বইপত্র সংগ্রহ করে স্পিড পোস্টে পাঠান। স্পিড পোস্টে আসা সেই বই দীপক কুমারের হাতে পৌঁছে দিতেও জেল প্রশাসন বহু টালবাহানা করে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ। পরীক্ষা করে দেখার নাম করে বইপত্র স্পেশাল ব্রাঞ্চের দপ্তরে পাঠিয়ে, মাসের পর মাস তা ফেলে রাখা হয়। পরিস্থিতি এমনই যে অর্ণব দামের মা তাঁকে একবার অভিধান দিতে চেয়েছিলেন, সেই অভিধানও নাকি পাঠানো হয়েছিল স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে! এত প্রতিকূলতার মধ্যেও দীপক কুমারের শিক্ষা অর্জনের জন্য এই বেনজির লড়াই, নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা যোগাবে বাকিদেরও।
Comments are closed.