রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সরকারের ব্যর্থতাতেই এনপিএ-র পাহাড়ে ভারত, মুখ খুললেন উর্জিত পটেল, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ কমানোর আবেদন
গত ডিসেম্বরে ছেড়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ। সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধের জেরেই পদ ছেড়েছিলেন একদা সরকার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উর্জিত পটেল, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৬ মাসেরও বেশি সময়। অবশেষে মুখ খুললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেল। আর মুখ খুলেই অভিযোগ করলেন ২০১৪ পর্যন্ত দেশের ঋণ ব্যবস্থার ছন্নছাড়া অবস্থা নিয়ে। তাঁর মতে, যার প্রভাব সামলাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক।
গত ৩ রা জুন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘ইন্ডিয়ান ইকনমি পলিসি’ শীর্ষক আলোচনায় উর্জিত প্যাটেলের বক্তব্য সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের ব্যাঙ্কিং পরিস্থিতির তুলনা টেনে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের দুরাবস্থার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আরবিআইয়ের পূর্ববর্তী গভর্নর ও কেন্দ্রীয় সরকারের বৃহৎ অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে না যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ওপর আরবিআইয়ের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারত।
তাঁর দাবি, ২০১৪ সালের আগে ব্যাঙ্কগুলি ইচ্ছেমতো ঋণ দিয়েছে। কেন্দ্র নিজের ভূমিকা পুরোপুরি পালন করেনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। এই তিন ঘটনার ফলেই ভারতীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় কার্যত আঁধার নেমে এসেছে, মাত্রা ছাড়িয়েছে এনপিএ-র পরিমাণ। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের বার্তাও দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ উর্জিত পটেল। পাশাপাশি, ঋণনীতির উপরে সরকারি আর্থিক নীতির ছড়ি ঘোরানোর পরে এ বার ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণে সরকার সরাসরি ঢুকে পড়তে চলেছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উর্জিত পটেল। তাঁর মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ভালো করার প্রাথমিক শর্তই হল সরকারি হস্তক্ষেপ-রহিত ব্যাঙ্ক নীতি। ব্যাঙ্কের ঋণ নীতি ও সরকারের আর্থিক নীতির মধ্যে যে বিস্তর ফারাক এবং সেই ফারাকের কথা বুঝতে হবে রাজনীতির কারবারিদের, এই বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ঋণ নীতি ও আর্থিক নীতিকে এক করে দেখা কখনওই উচিত নয়, ভারতে বছরের পর বছর ধরে সেটাই হয়েছে। এজন্য অবশ্য রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন উর্জিত পটেল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ ছাড়েন উর্জিত পটেল। নোটবন্দির ঠিক আগে, রঘুরাম রাজনের জায়গায় গভর্নর হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যা মাত্রা ছাড়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোষাগারে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষের আগেই উর্জিত পটেল ইস্তফা দেন গভর্নর পদ থেকে। মেয়াদ শেষের আগেই এভাবে গভর্নরের পদ ছাড়ার নজির আর নেই বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের একাংশের।
Comments are closed.