অর্পিতা ঘোষ: লোকসভা ভোটে হেরে নামলেন রাজনীতিতে, বালুরঘাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আবেদন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে
‘পাঁচ বছর সাংসদ হিসেবে কাজ করেছি, প্রশাসনিক কাজ করেছি, কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে রাজনীতি করিনি, এবার রাজনীতিটা করব’, বক্তা অর্পিতা ঘোষ। আর বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের পরাজিত সাংসদ অর্পিতা ঘোষ এই রাজনীতি করার জন্যই দীর্ঘ পাঁচ বছর সাংসদ থাকার সময় যা করেননি, এবার তাই তাই করবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন।
প্রথম কাজ, আর সার্কিট হাউস বা হোটেল নয়, বালুরঘাটে পাকাপাকিভাবে থাকবেন তিনি। তার জন্য বালুরঘাট শহরের কলেজ মোড়ে আট হাজার টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন।
দ্বিতীয় কাজ, শুধু ভোট চাইতে যাবেন না বালুরঘাটের মানুষের কাছে, ভোট দিতেও চান এই কেন্দ্রেই। তার জন্য বালুরঘাটে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন দীর্ঘ বছরের বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের ভোটার।
তৃতীয় কাজ, আর দলীয় কর্মীর ফ্ল্যাট বা ক্লাব থেকে নয়, দল চালাবেন পার্টি অফিস থেকে। তার জন্য বালুরঘাট শহরে স্থায়ী জেলা পার্টি অফিস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। খোঁজ করছেন জমির, যতদিন না তা মেলে ততদিন বাড়ি ভাড়া করবেন পার্টি অফিসের জন্য।
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষ হেরে যেতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল ভোটের আগে থেকেই। নিজের দলেরই জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র তলায়-তলায় বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, এমন আশঙ্কার কথা বারবার জানিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন অর্পিতাকে নানারকম রক্ষাকবচ দিতে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৪ সালের তুলনায় কয়েক শতাংশ বাড়িয়েও হেরে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ভোটের ফলের পর আর দেরি না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন এমন একজনের হাতে, যিনি কোনও দিনই সেভাবে রাজনীতি করেননি। তাঁর পরিচয় ছিল, নাট্যকার থেকে সাংসদ।
বিভিন্ন পেশার অনেকেই ২০০৬-০৭ সালের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে যুক্ত হয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু কাউকেই দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ লোকসভা ভোটে অপ্রত্যাশিত ধাক্কার পর অর্পিতা ঘোষকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তারপরেই দল ছেড়েছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। সেই ক্ষত মেরামত করতে লোকসভা ভোটের পর টানা যতদিন বালুরঘাটে থেকেছেন, ততদিন সাংসদ হিসেবেও থাকেননি পাঁচ বছরে।
‘দেখুন, সাংসদ হিসেবে দক্ষিণ দিনাজপুরে দলের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করিনি, কিন্তু এবার পাকাপাকি রাজনীতিটা করব। বাড়ি ভাড়া নিয়েছি বালুরঘাটে। এখানে ভোটার লিস্টে নাম তুলতে আবেদন করেছি। জানেন, এতদিন এখানে দল চলছে, আট বছর আমরা সরকারে, অথচ বালুরঘাটে একটা জেলা পার্টি অফিস পর্যন্ত নেই এখনও! এতদিন বিপ্লব দা (তৃণমূলের দলত্যাগী জেলা সভাপতি) গঙ্গারামপুরে একটা ক্লাবে বসে জেলা পার্টি চালাতেন। আমরা ঠিক করেছি, বালুরঘাটে জেলা পার্টি অফিস তৈরি করব। জমি দেখার কাজ চলছে। আপাতত এক কর্মীর খালি ফ্ল্যাটে বসে দলের কাজ চালাচ্ছি, কিছুদিনের মধ্যেই একটা স্থায়ী অফিস ভাড়া করতে হবে’, বলেন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি।
২০১৪ সালে সাংসদ হওয়ার পর একটা অভিযোগ বারবারই শুনতে হয়েছে অর্পিতা ঘোষকে, তিনি বালুরঘাটে সময় দেন না। যখনই বালুরঘাটে গিয়েছেন, থেকেছেন সার্কিট হাউসে। এবার সেই অভিযোগ ভুল প্রমাণ করে ‘বহিরাগত’ তকমা ঘোচাতে চান অর্পিতা ঘোষ। বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর হাতে যে সময় দু’বছরেও কম।
Comments are closed.