দশম শ্রেণিতে ফেল করে আত্মহত্যার চেষ্টা, তামিলনাড়ুর অটো চালক মুরুগান এখন খাবার যোগাচ্ছেন হাজার নিরন্নের মুখে
দশম শ্রেণিতে ফেল করেছিলেন। ব্যর্থতা মানতে পারেননি চেন্নাইয়ের বি মুরুগান। আত্মহত্যা করতে বাড়ি থেকে ৩০০ টাকা চুরি করে পালিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে শেষ করতে গিয়ে বুঝেছিলেন জীবনের মর্ম। শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য বেঁচে থাকা নয়, অন্য মানুষকে সাহায্য করা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে নিজের বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পেয়েছিলেন মুরুগান। এখন সপ্তাহান্তে ১ হাজারেরও বেশি নিরন্ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, গরিবের দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকার মাঝে অটো চালক বি মুরুগান খুঁজে পেয়েছেন জীবনের অন্য অর্থ।
সেটা ১৯৯২ সাল। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নাবালক বি মুরুগান। ৩০০ টাকা চুরি করে বাসে উঠে পড়েছিল বছর ষোলোর ছেলেটি। জানত না কোথায় যাবে। বাস শেষ যেখানে থামবে সেখানে নামার পরে শেষ করে দিতে হবে জীবন, এটাই ছিল লক্ষ্য। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে কোয়েম্বাটুরের সিরুমুগাইয়ে এসে থামে বাস। রাত দু’টোর সময় খিদে-তেষ্টায় নাজেহাল, ফুটপাথে বসে থাকা কিশোরকে সেদিন নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এক মুচি। খাইয়েছিলেন পরম যত্নে। সেদিনই ফুটপাতে অসংখ্য ভিক্ষুক আর আশ্রয়হীন মানুষকে দেখেছিলেন মুরুগান। নিজেকে শেষ করার ইচ্ছা চলে গিয়েছিল মন থেকে। সহায়-সম্বলহীন মানুষরাও কীভাবে বেঁচে আছে, এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার পর মুরুগান বুঝেছিলেন জীবনের মূল্য।
অটো চালকের কাজ পান মুরুগান। সপ্তাহান্তে যা রোজগার হত সেই টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়াতেন নিরন্নদের। মানুষের পাশে থাকার মধ্যে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পান মুরুগান।
রবিবার হলেই পাত পেড়ে প্রায় ১,৩০০ মানুষকে খাওয়ান তিনি। এইভাবে ২০০৮ সালে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খোলেন মুরুগানরা। সংস্থার নাম, ‘নিজহাল মাইয়াম’ অর্থাৎ আশ্রয়হীনদের আশ্রয়।
শনিবার রাত এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় মুরুগানের। রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় খাবার তৈরি। রবিবার দুপুরে নিরন্ন মানুষদেরকে খাবার দেওয়ার পাশাপাশি অন্তত ২৫ টি অনাথ আশ্রমে খাবারও পৌঁছে দেয় মুরুগানের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
বি মুরুগানের কথায়, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা মুহূর্ত আসে, যখন আমরা উপলব্ধি করি, আমরা নিজেদের যা ভাবি, তার চেয়েও আসলে বেশি কিছু আমরা।
মুরুগান তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পেয়েছেন অনেক সরকারি ও বেসরকারি সম্মান। কিন্তু সপ্তাহ শেষে রবিবার যখন গরিব মানুষদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারেন, তাঁদের হাসিমাখা মুখই মুরুগানের জীবনের পরম প্রাপ্তি।
Comments are closed.