জামিনে মুক্ত শীর্ষ মাওবাদী নেতা মুরলিধরন, মহারাষ্ট্র সরকারের আবেদন খারিজ করে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেলেন মাওবাদী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে জেলবন্দি মুরলিধরন। মঙ্গলবার পুণের ওয়েড়ওয়াড়া জেল থেকে মুক্তি পান বছর ৬৫ র কোনাথ মুরলিধরন ওরফে মুরলি কান্নামপিল্লি। তাঁকে জামিন দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট। কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্ট মুরলিধরনের জামিন নাকচ করার রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয়। তারপরই মুক্তি পান তিনি।
মাওবাদীদের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ ই মে, পুণের তালেগাঁও তাভাদে থেকে তাঁকে ও ইসমাইল হামজা নামে এক সহকারীকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র এটিএস। তারপর থেকে পুণের ওয়েরওয়াড়া জেলেই বন্দি ছিলেন তিনি।
সিপিআই মাওবাদীর তরফে মুরলিধরন ও ইসমাইল হামজা মহারাষ্ট্রে কাজ করতেন। পুলিশ সূত্রে দাবি, মুরলিধরন পরিচিতি ছিলেন থমাস জোসেফ এবং ইসমাইল পরিচিত ছিলেন জেমস ম্যাথিউ নামে। পুণের তালেগাঁও তাভাদের লোটাস ভিলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন এই দুজন। মহারাষ্ট্র এটিএসের দাবি, তাঁদের গ্রেফতারির সময় ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সন্দেহজনক বিভিন্ন নথিপত্র। পাশাপাশি একটি প্যান কার্ডও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই প্যান কার্ডে নাম রয়েছে থমাস জোসেফের কিন্তু ছবি মুরলিধরনের বলে পুলিশ সূত্রে দাবি।
২০১৫ সালের অক্টোবর নাগাদ এই মামলায় চার্জশিট পেশ করে মহারাষ্ট্র এটিএস। ২০১৬ র সেপ্টেম্বরে জামিনের আবেদন করেন মুরলিধরন। কিন্তু স্পেশাল কোর্টে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তারপর মুরলিধরনের আইনজীবীরা বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে মুরলিধরনের আইনজীবী সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেলকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এবছর ৫ ই মে বম্বে হাইকোর্ট মুরলিধরনের জামিন মঞ্জুর করে বলে মুরলিধরন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত এমন কোনও প্রমাণ বা নথি আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্টের জামিনের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু ২২ শে মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয়। বম্বে হাইকোর্টের রায়েই সিলমোহর দেয় শীর্ষ আদালত। তারপর জামিনের যাবতীয় শর্ত পূরণ করার পর গত মঙ্গলবার পুণের ওয়েরওয়াড়া জেল থেকে মুক্তি পান মুরলিধরন। তবে তাঁর সঙ্গী ইসমাইলেন জামিনের আবেদন এখনও গ্রাহ্য করেনি আদালত।
অবসরপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস অফিসারের ছেলে মুরলিধরনের পড়াশোনা চিন, রোমানিয়া, ডেনমার্কে। আদতে কেরলের বাসিন্দা মুরলিধরন বিদেশ থেকে স্কুলের পড়া শেষ করে কোঝিকোড়ে রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া অসমাপ্ত রেখেই অতি বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে কলেজ ছাড়েন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সিপিআইএমএল নক্সালবাড়ির জাতীয় সম্পাদক ছিলেন মুরলিধরন। তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ১ লা মে সিপিআই মাওবাদীর সঙ্গে মিলে যায় সিপিআইএমএল নক্সালবাড়ি। এনিয়ে তিনি ২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১০ দিন ধরে টানা বৈঠক করেন সিপিআই মাওবাদীর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গণপতির সঙ্গে। মুরলিধরনকে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করার পাশাপাশি দলীয় মুখপত্র পিপলস মার্চের সম্পাদনার ভার দেওয়া হয়।
Comments are closed.