গত বছরের মে মাস অবধি তিনি ছিলেন বিজেপির কাছাড় ইউনিটের সহ সভাপতি। দক্ষিণ-পূর্বে এই কাছাড় ইউনিটকেই বিজেপির সবচেয়ে পুরনো সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এখন সেই শান্তনু নাইক নিজেকে ভারতীয় প্রমাণে ব্যস্ত। ৫৪ বছর বয়সী শান্তনু নাইকের নাম নেই নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকায়। একই সঙ্গে বাদ গিয়েছে শান্তনুর দুই সন্তানের নামও।
সূত্রের খবর, শান্তনু নাইকের বাবা ঠাকোর ভাই নাইক জন্মসূত্রে গুজরাতি। ১৯৪৫ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঠাকোর ভাই ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিতে অসমে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। তারপর অসমেই থেকে গিয়েছেন ঠাকোর ভাই। পরবর্তীতে ঠাকোর ভাইয়ের মৃত্যুও হয়েছে অসমেই। তাঁর সন্তানরা সকলে অসমেরই বাসিন্দা। ১৯৬৪ সালে অসমের শিলচরে জন্ম শান্তনু নাইকের। শিলচর মিউনিপ্যাল বোর্ডের ইস্যু করা জন্ম শংসাপত্রও জমা দিয়েছিলেন। এমনকী তাঁর বাবা যে অসমেই বসবাস করতেন, তার প্রমাণ হিসেবে শিলচর শহরে যে বাড়িতে ঠাকোর ভাই ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়িওয়ালার শংসাপত্রও দাখিল করেছিলেন শান্তনু নাইক।
কিন্তু ২০১৮ সালে এনআরসির খসড়া তালিকা বেরোনোর পর দেখা যায়, তাতে নাম নেই স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলে তথা অসমের বিজেপি নেতা শান্তনু নাইকের। একই যুক্তিতে বাদ গিয়েছে তাঁর দুই সন্তানের নামও। এনিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সবাইকে চিঠি লিখেছেন শান্তনু নাইক। পাশাপাশি অসমে এনআরসির দায়িত্বে থাকা প্রতীক হাজেলার সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর।
গত বছরই ডিসেম্বর মাসে নতুন করে আবেদন করেছেন শান্তনু নাইক। গুজরাতে গিয়ে জোগাড় করে এনেছেন তাঁদের পৈত্রিক বাড়ির নথি। যেখানে প্রমাণ রয়েছে যে ১৯২২ সালে তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবা গুজরাতের নভসারি জেলার আঞ্চেলি গ্রামে জন্মেছিলেন। জমা করেছেন সেই সমস্ত নথি। যদিও শান্তনু মানছেন, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জেরে বেশ কিছু সুবিধা তিনি পেয়েছেন। বলছেন, সত্যি কথা বলতে কি, নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকাতেও যদি আমার নাম না থাকে, তাও চিন্তা করার কারণ নেই। আমি আইনি পথে এর সমাধান করতে পারব। কিন্তু যে গরিব মানুষদের নাম তালিকায় থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে, তাঁদের কী হবে? তাঁরা কোথায় যাবেন? নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন শান্তনু নাইক। আরএসএসের দীর্ঘদিনের কর্মী বর্তমানে অসম বিজেপির অন্যতম নেতা শান্তনু নাইক বলছেন, এনআরসির মাধ্যমে আসলে হিন্দুদেরই হেনস্থা করা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে এসে হাজার হাজার মানুষ যুগ যুগ ধরে অসমের মাটিতে বাস করছেন। এখন আচমকা তাঁদের বিদেশি তকমা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। বলছেন গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ এই বিজেপি নেতা। আমিও চাই অসম বেআইনি অনুপ্রবেশকারী মুক্ত হোক। কিন্তু আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, যে পদ্ধতিতে এনআরসি করা হচ্ছে, তা ষোলো আনা ভুলে ভরা।
Comments are closed.