লক্ষ্য ছুঁতে হাল না ছাড়ার গান আইপিএস সুরজ পরিহারের, সংসার চালাতে কখনও কোচিং সেন্টার, কখনও করেছেন কল সেন্টারে চাকরি
পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি ফেরাতে কখনও কোচিং সেন্টার খুলেছেন, কখনও কাজ করেছেন কল সেন্টারে। কিন্তু একদিনের জন্যও নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি উত্তর প্রদেশের জুয়ানপুরের বাসিন্দা সুরজ সিংহ পরিহার।
উত্তর প্রদেশের জুয়ানপুরে জন্ম সুরজ সিংহ পরিহারের। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের সঙ্গে কানপুরের জাজমৌতে চলে যান। সেখানেই এক হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা। ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো ও সৃজনশীল কাজেও সমান আগ্রহী। ২০০০ সালে মৌলিক লেখা ও কবিতার জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণের হাত থেকে জাতীয় বালশ্রী পুরষ্কার পেয়েছেন সুরজ সিংহ। কিন্তু বাড়ির অবস্থা ভালো না। পড়াশোনায় আগাগোড়া ভালো এই ছাত্রটি অর্থাভাবে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর কোচিং সেন্টার খোলেন। কোচিংয়ের টাকায় চলে কলেজের পড়াশোনা। কলেজ শেষ করেই চাকরির জন্য উঠে পড়ে লাগেন। এক বিপিও সেন্টারে কাজ নিয়ে নয়ডা চলে যান। কল সেন্টারে কাজ করার সময় তাঁর তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য ছিল সংসারের হাল ফেরানো, কিন্তু সুরজ সিংহের জীবনের লক্ষ্য ছিল আইপিএস অফিসার হওয়া।
একসময় উপলব্ধি করেন, নিজের লক্ষ্য থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন। অগত্যা চাকরি ছাড়েন। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে পারিবারিক চাপে পড়ে ফের রোজগারের রাস্তা খুঁজতে হয় সুরজ সিংহকে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বসেন ব্যাঙ্কের পরীক্ষায়। আর পরীক্ষায় বসেই বাজিমাত। চাকরি পান ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্রের থানে ব্রাঞ্চে। কিন্তু লক্ষ্য যে আইপিএস। তাই পড়াশোনা চালিয়ে যান।
২০১১ সালে ইউপিএসসির মেইনসে পাশ করেন। কিন্তু অফিস সামলে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় বাস ফেল। লক্ষ্যের এত কাছাকাছি এসেও স্রেফ বাস মিস করার জন্য স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। ফের কঠিন সিদ্ধান্ত, আবার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এবার শুধুমাত্র ইউপিএসসির পড়াশোনা। চেষ্টায় আসে সাফল্য। যোগ দেন আয়কর বিভাগে।
কিন্তু লক্ষ্য যে ছিল আইপিএস। অবশেষে ৩০ বছর বয়সে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন সুরজ সিংহ পরিহার। বর্তমান দান্তেওয়াড়ার এএসপি সুরজ সিংহ পরিহার মাওবাদী কার্যকলাপ দমন করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি কবিতা লিখে ও ভিডিও প্রচার চালিয়ে জনচেতনা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
Comments are closed.