তথাগত রায়: রোমিলা থাপার মুসলিম আক্রমণকারীদের অপকর্মের সমর্থক গোষ্ঠীর নেত্রী! জেএনইউ ইস্যুতে বিস্ফোরক মেঘালয়ের রাজ্যপাল
ঐতিহাসিক তথা জেএনইউয়ের এমেরিটা প্রফেসর রোমিলা থাপারের কাছে কর্তৃপক্ষের বায়োডেটা চেয়ে পাঠানোকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবার সেই বিতর্কে ঢুকে পড়লেন মেঘালয়ের বর্তমান রাজ্যপাল এবং বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।
শুধু বিতর্কে ঢুকলেনই না, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপারকে ‘মুসলিম আক্রমণকারীদের অপকর্মের সমর্থক গোষ্ঠীর নেত্রী’ বলেও চিহ্নিত করলেন।
১৯৯৩ সাল থেকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটা প্রফেসর রোমিলা থাপার। তার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ঐতিহাসিক। এমেরিটা বা এমেরিটাস প্রফেসরের স্বীকৃতি আজীবনের। কিন্তু সম্প্রতি জেএনইউ কর্তৃপক্ষ বর্ষীয়ান ঐতিহাসিকের কাছে বায়োডেটা চেয়ে পাঠায়। জানায়, একটি কমিটি খতিয়ে দেখবে, তিনি কী কী কাজ করেছেন। সেই অনুযায়ী পূনর্মূল্যায়ন করা হবে, যে তাঁকে সেই পদে রাখা হবে, না বাদ দেওয়া হবে।
বরাবরই নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির কর্মপদ্ধতির কঠোর সমালোচক রোমিলা থাপারকে এই চিঠি পাঠানোর ঘটনায় বিস্মিত শিক্ষামহলের একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ জেএনইউয়ের উপাচার্য এভাবেই রোমিলা থাপারকে হেনস্থা করছেন। পাশাপাশি, মোদী বিরোধীদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই প্রেক্ষিতে এবার ট্যুইট করে রোমিলা থাপারকেই নিশানা করলেন তথাগত রায়। সোমবার দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ মেঘালয়ের রাজ্যপাল একটি ট্যুইট করেন। তাতে কেমব্রিজের স্মাটস রিসার্চ ফেলো এডওয়ার্ড অ্যান্ডারসনের একটি ট্যুইটকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, জেএনইউর মত সংস্থা চালাতে গেলে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। সেখানে দেখা হয় না ব্যক্তিটি কে। তাই তাঁর সিভি চেয়ে পাঠানোর ইস্যুতে এই প্রগলভতা কেন, তা আমি বুঝতে পারছি না। এরপর বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি লেখেন, ‘ঘটনাচক্রে মুসলিম আক্রমণকারীদের অপকর্মের সমর্থক গোষ্ঠীর নেত্রী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে’।
কেমব্রিজের অধ্যাপক তথা রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো এডওয়ার্ড অ্যান্ডারসন, রোমিলা থাপারের পক্ষ নিয়ে একটি ট্যুইট করেছিলেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, রোমিলা থাপার বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় এবং বিশিষ্ট ভারতীয় ঐতিহাসিক। বিশ্বের যে কোনও সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সানন্দে তাঁকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ করতে রাজি। কিন্তু তিনি তাঁর গোটা কর্মজীবন উৎসর্গ করেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেএনইউর জন্য।
তথাগত রায় এডওয়ার্ড অ্যান্ডারসনের সেই ট্যুইটকেই ট্যাগ করে রোমিলা থাপারের কাছে বায়োডেটা চেয়ে পাঠানোর জেএনইউয়ের সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তবে তিনি আচমকা কেন মুসলিম আক্রমণকারীদের প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। কোনও ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাখ্যাকারীকে কেনই বা সরাসরি সমর্থক হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, একটি রাজ্যের রাজ্যপাল দেশের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিককে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন কি?
তবে শুধু রোমিলা থাপারই নন, এর আগে তথাগতর নিশানায় পড়েছেন প্রায় প্রত্যেক মোদী বিরোধীই। কখনও জয় শ্রীরাম স্লোগানের পক্ষ নিয়ে জয় বাংলা স্লোগানের বিরোধিতা, আবার কখনও বাঙালি মেয়েদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য। এমনকী ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়েও তাঁর মন্তব্যে উগ্র রাজনীতির গন্ধ পেয়েছেন অনেকে। তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন নেতা। তারপর বেশ কয়েকদিন চুপ থাকার পর ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বিতর্কে পা দিলেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল।
Comments are closed.