পেহলু খান গণপিটুনির ঘটনায় রাজস্থান সরকারের তৈরি করা সিটের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৭ সালে ঘটা নৃশংস গণপিটুনির ঘটনার তদন্তে বুধবারই স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম। পুলিশি তদন্তে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতির কথা স্টেটাস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজস্থানের ডিজি ভুপেন্দ্র সিংহের কাছে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতর রিপোর্টের সুপারিশ খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন ভুপেন্দ্র সিংহ।
গত মাসে রাজস্থানের অলওয়াড়ের একটি আদালত পেহলু খান গণপিটুনিতে অভিযুক্ত ৬ জনকেই বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেয়। ১৪ ই অগাস্ট আদালতের এই রায়ের পরই রাজস্থান সরকার জানায়, তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হবে। মুখ্যমন্ত্রী ৩ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দেন। সেই মতো সিট গড়ে নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু করা হয়। তাতেই উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতির কথা।
সিটের স্টেটাস রিপোর্টে উঠে এসেছে, পেহলু খান মৃত্যু তদন্তের দায়িত্বে থাকা ৪ জন তদন্তকারী আধিকারিকেরই গাফিলতি ছিল। রিপোর্ট বলছে, প্রথম তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন ঘটনার ৩ দিন পর। ফরেন্সিক টিম সঙ্গে ছিল না। যে গাড়ি থেকে নামিয়ে পেহলু খানকে মারধর করা হয়েছিল, সেই গাড়িরও ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়নি। সিটের রিপোর্ট বলছে, প্রথম তদন্তকারী অফিসার সবমিলিয়ে ২৯ টি মারাত্মক ভুল করেছিলেন।
দ্বিতীয় তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধেও গুরুতর গাফিলতির কথা রয়েছে সিটের রিপোর্টে। তদন্ত প্রক্রিয়া দেখভালের ব্যাপারেও গাফিলতি করেছিলেন দ্বিতীয় তদন্তকারী আধিকারিক বলে রিপোর্টে উল্লেখ। তৃতীয় তদন্তকারী আধিকারিক সাক্ষীদের বিবৃতি নেননি। এবং চতুর্থ তদন্তকারী আধিকারিক কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই অভিযুক্ত ৬ জনকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন বলে সিটের দাবি।
সিটের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিপিন যাদব, রবীন্দ্র যাদব, কালুরাম যাদব, দয়ানন্দ যাদব, যোগেশ খাটি এবং ভিম রাঠি, এই ৬ জনের বিরুদ্ধে খুনের পাশাপাশি ডাকাতি, দাঙ্গা লাগানো এবং মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগও আনা উচিত ছিল। পুলিশি তদন্তে এমন কোনও ধারা ছিল না। সিট গঠনের সময় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, নতুন করে তদন্তের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ, যেগুলো আগে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাও সংগ্রহ করবে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জয়পুর-বেহরোর জাতীয় সড়কের উপর গরু বোঝাই ট্রাক থামিয়ে দুগ্ধ ব্যবসায়ী পেহলু খানকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ৫৫ বছর বয়সী আদতে হরিয়ানার বাসিন্দা পেহলু খান, জয়পুরের একটি পশু মেলা থেকে গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। গরু পাচারের অভিযোগে পেহলু খান ও তাঁর ছেলেকে মারধর করা হলেও, গরু কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু হামলাকারীরা গরু পাচারের অভিযোগেই অনড় থাকে। পেহলু ও তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মারধর করা হয়। দু’দিন পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় পেহলু খানের।
Comments are closed.