সালটা ১৯৭২। বছর উনিশের তরুণী বীণারানি সাহার বিয়ে হয় অসমের বড়াপেটা রোড এলাকায়। আদতে কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা বীণারানি ব্যস্ত হয়ে পড়েন নতুন সংসার নিয়ে, যোগাযোগ কমতে থাকে বাপের বাড়ির সঙ্গে। বছর ৬৬-র বৃদ্ধা তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন অসমে। তাঁরই নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে ৩১ শে অগাস্ট প্রকাশিত এনআরসি। প্রায় ৫০ বছর অসমে বসবাসের পর নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে আতান্তরে পড়েছেন বীণারানি সাহা।
এনআরসিতে নাম তোলার জন্য আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে তিনি বা তাঁর পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালের ২৪ শে মার্চের আগে থেকে ভারতের বাসিন্দা। ১৯৫৩ সালে দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করা বীণারানি সেই প্রমাণপত্র যোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
অনেক চেষ্টার পর প্রমাণপত্র হিসেবে ১৯৬৩ সালে কেনা বাবার জমির দলিল জোগাড় করেছেন বৃদ্ধা বীণারানি সাহা। বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে পঞ্চায়েতের একটি নথিও জমা করেছিলেন তিনি। তবুও ২০১৮ সালের জুলাইয়ের এনআরসি খসড়াতে নাম ওঠেনি। আর সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতেও জায়গা হল না বৃদ্ধার।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে এনআরসি খসড়ায় তাঁর নাম না থাকা নিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা বীণারানি দেবীর কোনও জমির নথি পাননি। ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছিলেন বীণারানি দেবীর ছেলে চণ্ডীদাস সাহা। যদিও ছেলের নাম ছিল এনআরসিতে। এরপর নতুন করে বীণারানি সাহা তাঁর বাবার নামে থাকা জমির রেকর্ড প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। এনআরসি সেবাকেন্দ্রের শুনানিতেও দু’বার হাজির হয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, চূড়ান্ত এনআরসিতে তাঁর নাম না থাকার কোনও কারণ নেই। কিন্তু, ৩১ শে অগাস্ট প্রকাশিত এনআরসি থেকে বাতিল হওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন ৬৬ বছরের বীণারানি দাস। সমস্যা আসলে কোথায় সেটাই এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না বীণারানি সাহা! ভীত সন্ত্রস্ত বীণারানি কেবল বলে চলেছেন, জন্ম কোচবিহারের দিনহাটায়, আর তরুণী থেকে বৃদ্ধা হয়েছেন বড়াপেটা রোডে শ্বশুর বাড়িতে।
Comments are closed.