২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর মেয়াদ শেষ হয়েছিল ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট অ্যাডভাইসারি কমিটি কোহলিদের হেড কোচের পদে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বেছে নিয়েছিল কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলেকে। আর তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। বাতিল হওয়া রবি শাস্ত্রী সরাসরি তোপ দেগে বলেছিলেন, সৌরভের জন্যই তাঁকে বাদ পড়তে হল। মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন রবি শাস্ত্রী, পাল্টা বলেছিলেন সৌরভও।
এরপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে, কিন্তু সৌরভ-রবি শাস্ত্রী সম্পর্কের শৈত্য কাটেনি। ঘটনাচক্রে কোহলিদের হেড কোচের নাম এখনও রবি শাস্ত্রী এবং ২৩ শে অক্টোবর, বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিসিআই সভাপতির চেয়ারে বসতে চলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের দাদা।
হেড কোচের পদ থেকে বাদ যাওয়ার পর যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিলেন রবি শাস্ত্রী, তিনি এখন ভারতীয় বোর্ডের মাথায়। তাহলে কি এবার শাস্ত্রীর চিন মিউজিক শোনার পালা? সৌরভের মহানাটকীয়ভাবে বিসিসিআই প্রধান হওয়ার পর এই ইস্যুতেই এখন তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। ট্যুইটার, ফেসবুকে ঘুরছে এই সংক্রান্ত বহু মিম। এমনকী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শাস্ত্রীর তরফে কোনও শুভেচ্ছাবার্তাও বেহালার বাড়িতে এসে পৌঁছয়নি বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। অবশ্য এই খবরের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।
সিএবিতে সাংবাদিক বৈঠকে যদিও সৌরভ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, কোহলিদের হেড মাস্টারের দায়িত্ব পালনে শাস্ত্রীই এখন সঠিক লোক। একইসঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, তাঁর উপর দেখানো আস্থার যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে শাস্ত্রীকে। আর বোর্ড প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যেই জল্পনার ইন্ধন খুঁজে পাচ্ছেন নেটিজেনরা। তবে একটা বিষয় আপাতভাবে পরিষ্কার, শাস্ত্রীর উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
সৌরভকে খুব কাছ থেকে দেখা ক্রীড়ামহলের লোকেরা অবশ্য বলছেন, দায়িত্ব নিয়েই শাস্ত্রীকে ছাঁটাই করার বান্দা সৌরভ নন। বরং যোগ্যতার সঠিক মর্যাদা কীভাবে দিতে হয়, তা সৌরভই ভারতীয় ক্রিকেটকে দেখিয়েছিলেন। তাঁদের বরাভয়, বিসিসিআই সভাপতি সৌরভের থেকে আপাতত রবি শাস্ত্রীর ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে যে শাস্ত্রী ভারতের সফতম অধিনায়কের তালিকায় সৌরভকে বাদ দেন এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে ধোনিকে ভারতীয় ক্রিকেটের দাদা অধিনায়ক বলে মন্তব্য করেন, সৌরভের বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসা তাঁর কাছে খুব একটা সুখকর নয় বলাই বাহুল্য।
একইভাবে শাস্ত্রী বর্ণিত ভারতীয় ক্রিকেটের দাদা ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও কি সৌরভের প্রেসিডেন্ট পদ পাওয়ায় সামান্য হলেও বিব্রত? প্রশ্ন, সোশ্যাল মিডিয়ার। সৌরভের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাঁচির মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রবেশ। এই প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে, সৌরভ যখন অবসর নেন, তখন দলের অধিনায়কের নাম ধোনি। জনশ্রুতি আছে, ২০০৮ সাল নাগাদ এমএসডির অঙ্গুলি হেলনেই কেরিয়ারে দাঁড়ি পড়েছিল প্রিন্স অফ ক্যালকাটার। ১১ বছর পর ধোনির নিজের কেরিয়ারও কার্যত একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। চারদিকে প্রশ্ন, ধোনি কি অবসর নেবেন? ধোনি নিজে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ফলে ধোঁয়াশা ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে সাংবাদিক বৈঠকে সৌরভ জানিয়েছেন, তিনি কথা বলবেন ধোনির সঙ্গে। পাশাপাশি কমেন্ট্রি বক্সেও সৌরভ-সচিন-সহবাগ-হরভজন-গৌতম গম্ভীরদের মুখে বারবার শোনা গিয়েছে ধোনির সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তার কথা। সেক্ষেত্রে ধোনির সঙ্গে কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে কথা বলবেন? যদি তাই হয়, তাহলে জোড়া বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কী বলবেন? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে বিসিসিআই সভাপতির চেয়ারে সৌরভ বসার আগে থেকেই মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে একাধিক জল্পনা। তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, রবি শাস্ত্রী কিংবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বোর্ডের তরফে কোনও অন্যায্য সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে না। যেখানে সভাপতির চেয়ারে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, তখন ক্রিকেটারদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোনও সিদ্ধান্তই দাদার সমর্থন পাবে না। এমনটাই মনে করছে ক্রীড়া মহল।
Comments are closed.