গত এক-দেড় বছর ধরে #মিটু মুভমেন্টের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন বহু মহিলা। এই তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। এবং কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থার বহু অভিযোগই উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবার প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ঘটনা উল্লেখ করে আনন্দবাজার পত্রিকাকে নিশানা করলেন সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন।
এর আগেও একাধিক সাহিত্যিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন দ্বিখণ্ডিত-র লেখক। তবে যৌন হেনস্থার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আনন্দবাজার পত্রিকার ভূমিকা নিয়ে তসলিমা নাসরিনের ক্ষোভপ্রকাশ যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।
ঘটনার সূত্রপাত দিন দশেক আগে। বাংলা ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রতিষ্ঠিত সদস্য রঞ্জন ঘোষালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন এক মহিলা। ফেসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৩-২০০৪ সাল নাগাদ তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন রঞ্জন ঘোষাল। মহীনের ঘোড়াগুলির মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডের বিখ্যাত শিল্পীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার ঘটনায় স্বভাবতই উত্তাল হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া।
এই প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত রঞ্জন ঘোষাল গত ২০ শে অক্টোবর ‘নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী’ বলে একটি ফেসবুক পোস্ট করলেও, তাতে লেখেন এই ঘটনা বছর ১৫ আগের। তখন আদালতেই এই মামলার নিষ্পত্তি হয়।
এই প্রেক্ষিতে গত ২৩ শে অক্টোবর একটি ফেসবুক পোস্ট করেন ‘লজ্জা’র লেখক তসলিমা নাসরিন। অভিযুক্ত রঞ্জন ঘোষালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনন্দবাজার পত্রিকার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। তসলিমা লেখেন, রঞ্জন ঘোষালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে অভিযুক্তকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করা হয়। কিন্তু যে সময় তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন, তখন কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা? সেই প্রশ্নের উত্তরও ফেসবুক পোস্টে নিজেই দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা দাবি করেন, তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে ফোন করা হয়নি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। এরপরেই আনন্দবাজার পত্রিকাকে নিশানা করে তসলিমা লেখেন,’তোমার লোকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এলে তুমি খবর করবে না, বরং অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে অস্ত্র শানাবে। কিন্তু অন্য লোকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এলে তুমি খবর করবে, সেই লোককে শাসাবে।’ এরপরেই আনন্দবাজারকে কটাক্ষ করে তসলিমা লেখেন ‘এ কেমন নিরপেক্ষতা!’
গত বছরই আনন্দবাজার পত্রিকার উর্ধ্বতন আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে thebengalstory.com এ নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন দুই মহিলা সাংবাদিক (যাঁরা পরে আনন্দবাজার থেকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন)। সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকা কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এবার প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে আনন্দবাজার পত্রিকাকে বিঁধলেন তসলিমা নাসরিন।
#মিটু মুভমেন্টের অনেক আগেই একাধিকবার তসলিমা নাসরিন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সহ একাধিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। ২০১২ সাল নাগাদ তা নিয়ে তীব্র শোরগোলও হয়।
Comments are closed.