পাকিস্তান নিয়ে কেন চুপ, সেলিমকে বেনজির নিশানা টাইমস নাউ-এর! সংবাদমাধ্যমের একাংশ বিজেপির আইটি সেল, পাল্টা সিপিএম নেতা
পেটের দায়ে মুর্শিদাবাদের গ্রাম ছেড়ে তাঁরা গিয়েছিলেন কাশ্মীর। কিন্তু জঙ্গিদের গুলির মুখে ঝাঁঝরা হয়ে বাংলায় ফিরল তাঁদের নিথর দেহ। শোকের ছায়া বাংলার সীমানা টপকে, ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। নক্কারজনক ঘটনার নিন্দায় মুখর কংগ্রেস থেকে তৃণমূল-বাম।
৫ ই অগাস্টের পর থেকে কাশ্মীরে নেই কোনও নির্বাচিত সরকার। সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারি শাসনে থাকা উপত্যকায় এই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে মোদী-শাহ সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল। এই প্রেক্ষিতে প্রবল চাপে পড়া মোদী সরকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে কি আবির্ভূত সংবাদমাধ্যমের একাংশ? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ, ঘটনার কড়া নিন্দা করে করা সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের ট্যুইটকে একটি সংবাদমাধ্যম সাম্প্রদায়িকতার রঙে রাঙিয়ে টেনে এনেছে পাকিস্তানকেও! পাল্টা জবাব দিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদও।
ঘটনার সূত্রপাত কাশ্মীরে মর্মান্তিক ঘটনার কড়া নিন্দা করে মহম্মদ সেলিমের একটি ট্যুইটকে নিয়ে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ সেলিম একটি ট্যুইটে গোটা ঘটনাটিকে মোদি মেড ডিজাস্টার হিসেবে আখ্যা দিয়ে লেখেন, নিরাপত্তাকর্মীরা যখন অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে জন সংযোগ কর্মসূচিতে ব্যস্ত, তখন মুর্শিদাবাদ থেকে যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের হত্যা করা হল। তারপর তিনি হ্যাশট্যাগে লেখেন, পিকনিক ফর ইউরো ফ্রেন্ডস এবং কিলিং অফ দেশি লেবারার্স। সেই সঙ্গে ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফের সেদিনের প্রথম পাতার এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিও তুলে ধরেন মহম্মদ সেলিম।
মহম্মদ সেলিমের সেই ট্যুইটকে নিয়ে তারপর শুরু হয়ে যায় ইংরেজি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাউয়ের হইচই। তাঁরা দাবি করতে থাকে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে পাকিস্তান। অথচ মহম্মদ সেলিম কেন পাকিস্তানকে দোষারোপ না করে কেবলমাত্র মোদী সরকারকে নিশানা করছেন? প্রায় আধঘণ্টা ধরে মহম্মদ সেলিম কেন পাকিস্তান নিয়ে চুপ, তা নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন তোলে টাইমস নাউ।
টাইমস নাউয়ের এই ভিডিও ক্লিপিংস তুলে ধরে ট্যুইটারে তার জবাব দেন মহম্মদ সেলিমও। লেখেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সেনা অধ্যুষিত এলাকায় কাজ করতে গিয়ে আমার রাজ্যের অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। আর এ জন্য পাকিস্তান নয়, ভারত সরকারের উপরই দায়িত্ব বর্তায়।
মহম্মদ সেলিমের এই ট্যুইটে আরও বিস্ফোরক তথ্য খুঁজে পায় টাইমস নাউ। এবার তাদের বক্তব্য, সেলিম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাকিস্তানকে আড়াল করতে মোদীকে দোষারোপ করছেন। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদকে কার্যত পাকিস্তান সমর্থক হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চলতে থাকে এই ইংরেজি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাউয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় জঙ্গি হামলা হলে, তার দায় কেন প্রতিবেশী দেশকে নিতে হবে, কেনই বা ভারত সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হল, সেই প্রশ্ন না তুলে বাম নেতাকে নিশানা করা হতে থাকে।
টাইমস নাউয়ে সম্প্রচারিত সেই ক্লিপ, নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে তুলে ধরে সেলিম লেখেন, সত্যিই আপনাদের সাহায্যের খুব প্রয়োজন। এটুকুই বলতে পারি।
thebengalstory.com কে নিজের প্রতিক্রিয়ায় সেলিম জানিয়েছেন, আমার নাম-পদবীর উপর ভিত্তি করে কৌশলে আমাকে দেশদ্রোহী এবং পাকিস্তান সমর্থক হিসেবে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য, এই ঘটনায় প্রবল চাপে পড়া মোদী সরকারকে অক্সিজেন যোগানো। আর তাই বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের মানুষকে দেশবিরোধী এবং পাকিস্তানপ্রেমী বলে দাগিয়ে দিতে পারলেই, মোদী সরকারের দেশপ্রেম প্রমাণ করা যাবে। মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, মোদী-অমিত শাহদের তুষ্ট করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ সজ্ঞানে সাংবাদিকতার মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করছেন।
Comments are closed.