কেরলে ছড়াচ্ছে মারণ ভাইরাস নিপাহ। তবে শুধু কেরল নয়, সচেতন থাকতে হবে এই রাজ্যের মানুষকেও। পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যেহেতু বাংলেদেশে আগেই এই নিপাহ ভাইরাসের প্রভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তাই এখানেও সংক্রমণের একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। প্রবল জ্বর, গোটা শরীরে ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা এবং চোখ বা নাক থেকে জল পড়ার মত উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে প্রথমে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জ্বর যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে তাহলে অযথা সময় নষ্ট না করে প্রথমেই কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়া উচিত। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা শুরু করতে হয়।
সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্বর, মাথার যন্ত্রণার মতো উপসর্গ দেখা দিলেই স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।। কিন্তু তা না করে সবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মানব দেহে নিপাহ-র সংক্রমণ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, রোগী অতি দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুযন্ত্র বিকল হয়ে কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারেন। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশ।
এই সময়ে প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে শহর কলকাতায় অনেকেই কাটা ফল বা রাস্তায় বিভিন্ন জুস কাউন্টার থেকে ফলের রস কিনে খান। অবিলম্বে এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, নিপাহ ভাইরাস ফল খাওয়া বাদুড়ের শরীরে প্রথম বাসা বাঁধে। তবে প্রাথমিক ধারক হিসেবে বাদুড়টির কোনও ক্ষতি না হলেও ওই ফল কোনও ব্যক্তি খেলে, তিনি এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই গ্রীষ্মকালীন যে কোনও ফল, যেমন আম, জাম, কাঠাঁল বা লিচু বাজার থেকে কেনার আগে ভালোভাবে দেখে নিতে হবে তাতে কোনও ছিদ্র আছে কিনা। এমন কী জুস কাউন্টার থেকে ফলের রস খাওয়ার আগেও ক্রেতাকে দেখে নিতে হবে ফলে কোনও ছিদ্র আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সেই ফল থেকে বানানো রস খাওয়া কখনই উচিত নয় । এর পাশাপাশি মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, কোনও কিছু খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধোওয়া এই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চললে এই মারণ ভাইরাসকে ঠেকানো সম্ভব।
তবে শুধু বাদুড় নয়, কালো শুকরের মাংস খেলেও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থেকে যায়। আমাদের রাজ্যে বিশেষত কলকাতাতেও শুকরের মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে। তাই নিপাহ ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে চাইলে রাজ্যবাসীকে প্রাথমিকভাবে এই সব স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। অকারণে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবে কান না দিয়ে প্রাথমিক কিছু স্বাস্থ্য বিধি মানলেই ঠেকানো সম্ভব এই মারণ ভাইরাসকে।
(কথা বলেছেন অর্পিতা লাহিড়ী।)