মহারাষ্ট্র নিয়ে মুখ পুড়ল বিজেপির। সমস্ত নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে গত শনিবার সকালে এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারকে ম্যানেজ করে দেবেন্দ্র ফড়নবিসকে মুখ্যমন্ত্রী করা হল। অজিত হলেন উপ মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি ভেবেছিল, ফ্লোর টেস্টে তারাই জিতবে। এনসিপি, শিবসেনা এবং কংগ্রেস থেকে বিধায়ক ভাঙ্গিয়ে তারা বাজিমাৎ করবে। কিন্তু শারদ পাওয়ারের ‘পাওয়ার গেমের’ কাছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি একের পর এক গোল খেয়ে গেল। লোকসভা ভোটের মাত্র ছয় মাসের মাথায় বিজেপির কাছে এটা বড় ধাক্কা।
শনিবার থেকে মাত্র তিনদিন মুখ্যমন্ত্রিত্ব করলেন দেবেন্দ্র। মঙ্গলবার দিনভর কম নাটক হল না মহারাষ্ট্রের রঙ্গমঞ্চে। তার জের চলল সুপ্রিম কোর্টেও। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে গোপন ব্যালটে ফ্লোর টেস্ট হবে। বিধানসভায় ফড়নবিসকে প্রমাণ দিতে হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন তাঁর দিকে রয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, শনিবার সকাল থেকেই বিজেপি নেতারা তিন বিরোধী দলের থেকে বিধায়ক কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শারদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে এবং পৃথ্বীরাজ চৌহানের মতো কংগ্রেস নেতারা যেভাবে নিজের নিজের দলের বিধায়কদের আগলে রেখেছিলেন, তাতে বাসর ঘরের কোনও ছিদ্র খুঁজে পাননি বিজেপি নেতারা। শারদ পাওয়ার শনিবার সকাল থেকেই বলে আসছিলেন, মহারাষ্ট্রকে যদি বিজেপি নেতারা কর্ণাটক, গোয়া, কিংবা মণিপুর ভাবেন, তাহলে তাঁরা ভাবের ঘরে বাস করছেন। বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মারাঠা স্ট্রংম্যান শারদ পাওয়ার। এবং তিনি তা করেও দেখালেন হাতেনাতে।
সোমবার সন্ধ্যায় তিন দলের ১৬২ জন বিধায়ককে হায়াত হোটেলের বল রুমে রীতিমতো শপথ নেওয়ানো হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে অজিত পাওয়ারকে বোঝানো। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, দলীয় নেতৃত্ব এবং কাকাকে না জানিয়ে অজিত গোপনে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়লেও শারদ কিন্তু ভাইপোকে দল থেকে বহিষ্কার করার পথে হাঁটেননি। তাঁকে শুধু পরিষদীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও তিনি অতি কৌশলী পদক্ষেপ নেন। দলের মধ্যে অজিতকে বহিষ্কারের একটা চাপ ছিল। শারদ সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। অর্থাৎ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ভাইপোকে তিনি ফিরিয়ে আনতে পারবেনই। শুধু তাই নয়, শারদ এবং বাকি দুই দলের নেতারাও নিশ্চিত ছিলেন, বিধায়ক কেনাবেচা এবার আর বিজেপির পক্ষে অত সহজ হবে না।
মহারাষ্ট্র নিয়ে সব দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ আনে। বিজেপি নেতারা খুব বুক বাজিয়ে কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপিকে অনৈতিক বলে গাল পেড়েছিলেন। কিন্তু মাত্র তিনদিনের মধ্যে বিজেপির গালে যে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় এসে পড়ল, তার ব্যথা অমিত শাহদের অনেকদিন সহ্য করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার সকালে বলল, বুধবার বিকেলের মধ্যে ফ্লোর টেস্ট করতে হবে ফড়নবিসকে। তার কিছুক্ষণ পরে অজিত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ইস্তফা দিয়ে এলেন। তার কিছু পরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ফড়নবিস জানালেন। তিনিও ইস্তফা দিচ্ছেন। গত শনিবার অজিতকে কাছে পেয়ে বিজেপি এমন গদ্গদ হয়ে গিয়েছিল যে, তাঁর বিরুদ্ধে ৭০ হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতিতে ন’টি মামলা গুটিয়ে নেওয়ার কথাও সোমবার জানিয়ে দেয় ওই রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা। তা নিয়ে বিরোধীরা সোরগোল পাকায়। এখন তো যা অবস্থা, তাতে বিজেপির আমও গেল, ছালাও গেল।
আপাতত মহারাষ্ট্রে প্রায় এক মাস ধরে চলা মহা-নাটকের মহা যবনিকাপাত হল, বলা যেতে পারে। শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস নেতারা রাতেই রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির কাছে গিয়েছেন সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে। সম্ভবত বুধবারই নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ হবে। ২৬ নভেম্বর সারা দেশে ঘটা করে পালিত হচ্ছে সংবিধান দিবস। মহারাষ্ট্র বিধানসভাতেও তার অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানেও গরহাজির থেকে অজিত জল্পনা আরও বাড়িয়ে দেন। সংবিধান দিবসেই যে বিজেপিকে এমন ধাক্কা খেতে হবে, তা অমিত শাহদের কল্পনারও বাইরে ছিল।
বুধবার বিকেলের মধ্যে মহারাষ্ট্রে ফ্লোর টেস্টের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট
Comments are closed.