চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। ফুটবলার হয়েই পরিচিতি পাওয়ার স্বপ্ন। বড় দলের জার্সিতে তিন কাঠির নীচে দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে ম্যাচ জেতানোর স্বপ্ন। গোলরক্ষক হিসেবে এলাকায় ভালোই পরিচিতি ছিল বেলঘরিয়ার রাহুল দাসের। ময়দানের ছোট ক্লাব থেকে যোগ দিয়েছিলেন এটিকে জুনিয়র দলে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ভালো খেলে এটিকে সিনিয়র দলের হয়ে আইএসএল খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন রাহুল। কিন্তু একটা চোট তাঁর সব কিছু শেষ করে দিল।
চোট তো অনেক ফুটবলারই পান। আবার তাঁরা মাঠে ফিরেও আসেন। রাহুল বাঁ হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে। পিজি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর দেখা যায় ব্যান্ডেজ এত শক্ত করে বাঁধা যে, হাঁটুর পাশে কিছুটা অংশ পচে গেছে। দু’পাশে বড় বড় ফোসকা। সেটা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। তিন মাস থাকতে হয়েছিল হাসপাতালে।
বাড়ি ফিরেও হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই বছর শেষে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবার অস্ত্রোপচার। প্রায় এক বছর কেটেছে বিছানায়। এর মধ্যেই বাবা মারা গিয়েছেন। রাহুল তখন হাঁটতেই পারছেন না। বুঝতে পারছেন না কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন। ২০১৮ সাল থেকে অল্প অল্প করে হাঁটা শুরু। ব্যক্তিগতভাবে রাহুলকে খুব সাহায্য করেছিলেন এটিকে দলের ফিজিও। গত বছরে তাঁর মা মারা যান।
তারপর থেকে একাই লড়ে যাচ্ছেন রাহুল। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে গেছে অনেকদিন আগেই। এখন তাঁকে লড়তে হচ্ছে বেঁচে থাকার লড়াই। কিছু করতেই হবে, না হলে যে খাবার জুটবে না। এক বন্ধুর সহায়তায় একটি ছোট জুতোর দোকান দিয়েছেন। ভেবেছিলেন বড় দলের জার্সিতে দুরন্ত গোলকিপিং করে নায়ক হবেন। প্রতিদিন নাম আসবে মিডিয়ায়। তাঁর নাম গোটা দেশের ফুটবলপ্রেমীরা জানবেন। এখন সেই রাহুল দাসকে খদ্দেরদের পায়ে জুতো পরিয়ে দিতে হয়। হাত জোড় করে অনুরোধ করতে হয় জুতো কেনার জন্য। না হলে যে খাবার জুটবে না রাহুল দাসের। ভুল চিকিৎসায় জীবনটাই শেষ হতে বসেছে তাঁর। জুতোর দোকান থেকে মাস গেলে হাজার ছয়েক টাকার বেশি থাকে না। এই টাকায় এখনকার দিনে সংসার চালানো খুব মুশকিল। রাহুল এখন তাই কাতরভাবে একটা চাকরি চাইছেন।
Comments are closed.