ভারতে তীব্র হয়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। এই ভাইরাসের ছোবলে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছেন, আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,কেমন করে ছড়াতে পারে এই মারণ ভাইরাস এবং কীসেই বা এর ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।
সূক্ষ্ম অথচ প্রবল সংক্রামক এই ভাইরাস মানুষের চুলের থেকেও প্রস্থে ৯০০ গুণ ক্ষুদ্র। এর প্রভাবেই আজ বিশ্ব কাঁপছে। ইতিমধ্যে আক্রান্তের শিকার হয়েছে ৬০ টি দেশ।
করোনা আক্রান্তের কাছাকাছি গেলে কি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে? ধরা যাক, কেউ সবজির দোকানে গিয়েছেন, দোকানদার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তার প্রভাব কি ওই ক্রেতার উপর পড়তে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। তবে আপাতত চারটি কথা বলা যায় এ বিষয়ে। আপনি ওই আক্রান্তের কতটা কাছাকাছি আসছেন, কতক্ষণ আক্রান্তের কাছাকাছি থাকছেন, সে সময় ‘ভাইরাল ড্রপলেটস’ ছড়াচ্ছে কি না এবং আপনি কতটা সময় মুখের মধ্যে হাত রাখছেন (এ প্রসঙ্গে বয়স ও শারীরিক অবস্থাও বড় ফ্যাক্টর)।
এই ‘ভাইরাল ড্রপলেট’ কী?
ড্রপলেটে থাকে ভাইরাল কণা। ভাইরাস হল অতিক্ষুদ্র মাইক্রোব যা কোষকে আক্রমণ করে। এটাই এই ভাইরাসের ‘লাইফস্টাইল, মন্তব্য কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ ভেটেরনারি মেডিসিনের অধ্যাপক গ্যারি হুইটেকারের। এই মিউকাস কাশি, হাঁচি, সর্দি এমনকী হাসি, নিঃশ্বাস, কথাবার্তা ও গান গাইলেও ছড়াতে পারে। মিউকাসটি কিছুক্ষণের জন্য বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। তারপর সে মাটিতে পড়ে যায়। একেই বলা হয় ‘ভাইরাল ড্রপলেট’। এই ভাইরাল ড্রপলেট মুখ, চোখ ও নাকের মধ্য দিয়ে ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়। এমনকী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলা, কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার ফলেও এই ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
কত কাছাকাছি এলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মুখপাত্রের কথায়, কোনও রোগীর কাছ থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। আবার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, ৬ ফুটের ব্যবধানে দাঁড়ালেও এই মারণ ভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কেউ কি বুঝতে পারবেন অপরজন করোনাভাইরাসের শিকার?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণভাবে বোঝা যাবে না, কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। কারণ করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলি ঠান্ডা লেগে সর্দি, কাশির মতোই। এমনকী বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোনও লক্ষণ ছাড়াই করোনাভাইরাস একজনের থেকে আর একজনের দেহে ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যার কাছ থেকে এটা ছড়াচ্ছে, ধরে নিতে হবে, সে এই রোগে আক্রান্ত।
কোনও পাবলিক প্লেস থেকে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস?
হ্যাঁ, অবশ্যই। হাতের স্পর্শ থেকেও ছড়াতে পারে। হংকং-এর একটি বুদ্ধ মন্দির দর্শনের পর প্রচুর মানুষ অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছিল সেন্টার ফর হেলথ। তাদের দাবি, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের উপর জড়ানো কাপড়, রেস্টরুম, যেখানে প্রচুর মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন, সেখানেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে এবং তা থেকেই এতজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
একটি গবেষণা বলছে, ধাতব বা কাচের পাত্র, প্লাস্টিকের মধ্যে দু’ঘণ্টা থেকে ন’দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে। সে পাত্রটি পরিষ্কার বা নোংরা যাই হোক না কেন তাতে এই মারণ ভাইরাসের কিছু যায় আসে না।
সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও জিনিসে হাত দেওয়ার পর ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কারণ, ভাইরাল ড্রপলেটস ত্বক ভেদ করতে পারে না।
কোনও বিশেষ সাবান কি এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোনও বিশেষ ব্র্যান্ডের সাবান, হ্যান্ডওয়াশ এই মারণ ভাইরাসকে ঠেকাতে পারে না।
করোনায় আক্রান্ত প্রতিবেশী হাঁচছে, আমার কি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন আছে?
হার্ভার্ড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডঃ আশিস কুমার ঝা জানাচ্ছেন, ভাইরাল কণা দেওয়াল বা কাচ ভেদ করে যেতে পারে এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু খোলা জায়গা যেখানে আলো-বাতাস খেলা করছে, সেখানেই করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা সব থেকে বেশি। তাঁর কথায়, প্রতিবেশী হাঁচির পর কোনও জানলা বা দরজার রেলিং-এ হাত রাখলেন, সেখানে যদি আপনি হাত রাখেন, সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।
যৌন সম্পর্কে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুমুর মাধ্যমে অবশ্যই করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় কি না তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
Comments are closed.