Bengal Ranji Journey: শেষ রক্ষা হল না বাংলার, রঞ্জি গেল সৌরাষ্ট্রের হাতে
তীরে এসে তরী ডুবল। মাটি কামড়ে পড়ে থেকেও শেষ রক্ষা করতে পারল না Bengal Ranji Team। রঞ্জি ট্রফিতে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল অনুষ্টুপদের। সৌরাষ্ট্র হল এবারের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন। ধারাবাহিক ভাবে ফর্মে থাকা অনুষ্টুপের ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল জিতে ফেলেছিল বাংলা। কিন্তু ফাইনালে পঞ্চম দিনে সৌরাষ্ট্রের ফাস্ট বোলার জয়দেব উনাদকটের বলে এলবি-র ফাঁদে পড়লেন অনুষ্টুপ। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বাংলার ব্যাটিং লাইন আপ। এবারের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল অভিমন্যু, ঈশ্বরনদের রঞ্জি জেতার স্বপ্ন।
এর আগেও তিনবার, ১৯৯৩-৯৪, ২০০৫-০৫ এবং ২০০৬-০৭ সালে বাংলা রঞ্জি ফাইনালে উঠলেও ট্রফি ছোঁয়ার সাধ অধরাই থেকে গিয়েছে। এবারও তা অধরাই থেকে গেল মনোজ তিওয়ারিদের। তিরিশ বছর আগে অরুণ লালের অদম্য লড়াই বাংলাকে রঞ্জি ট্রফির সাধ দিয়েছিল। এবারে তিনিই কোচের ভূমিকায়। ফাইনাল জিতলে অনন্য নজির গড়তেন অরুণ। কিন্তু হল না। তবে এবারের রঞ্জি মনে থাকবে অনুষ্টুপের অদম্য লড়াইয়ের জন্য।
রঞ্জিতে বাংলার পরিসংখ্যান (Bengal in Ranji Trophy)
দেখে নেওয়া যাক রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার সাফল্যের পরিসংখ্যান এবং কোন কোন খেলোয়াড়ের চোখ ধাঁধানো ইনিংস এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে তাজা।
রঞ্জিতে বাংলার ইতিহাস
Ranji Trophy Bengal শেষবার জিতেছিল ১৯৯০ সালে। তখন বাংলার হয়ে ফাইনালে অভিষেক হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির। এবার তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট। ১৩ বছর পর বাংলা ফের রঞ্জির ফাইনালে পৌঁছে ছিল। কিন্তু ৩০ বছরের সোনালি ইতিহাস ফিরল না রাজকোটে। সেবার বর্তমান বাংলার কোচ তথা প্রাক্তন বাংলার ব্যাটসম্যান অরুণ লাল ও স্পিন বোলিং কোচ উৎপল চ্যাটার্জির লড়াইয়ের উপর নির্ভর করে রঞ্জি জিতে নিয়েছিল বাংলা।
এবারের সেমিফাইনালে অনুষ্টুপ মজুমদার ১৪৯ রানের একটি চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেছিলেন। সেমিফাইনালে প্রথম ইনিংসে বাংলা করেছিল ৩১২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন বাংলার ব্যাটিং অর্ডার কর্ণাটকের বোলিংয়ে ভেঙে পড়ে তখনও ৪৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন অনুষ্টুপ।
তবে রাজকোটে ফাইনালে ব্যর্থ হলেন অনুষ্টুপরা। দরকার ছিল ৭২ রান, ক্রিজে ছিলেন অনুষ্টুপ। চতুর্থ দিনে জয়ের গন্ধ পাওয়া বাংলার আশায় জল ঢেলে দিলেন পেসার জয়দেব উনাদকাট। অনুষ্টুপকে ব্যক্তিগত ৬৩ রানের মুখে ফিরিয়ে দেন তিনি। আর সেই সঙ্গে ফের ধস নামে বাংলার ব্যাটিং অর্ডারে। অর্ণব নন্দীর অপরাজিত ৪০ রানের মরিয়া ইনিংসও কাজে এল না। উল্টো দিকে সঙ্গর অভাবে ৪৪ রান দূরে শেষ হয়ে গেল বাংলার ইনিংস। কাজে এল না ইশান্ত পোড়েল, মুকেশের দুর্দান্ত বোলিং। সুদীপ চ্যাটার্জির ৮১ রানের ইনিংস, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহার ৬৪ রানের লড়াই বুকে রেখে ৩০ বছর রঞ্জি না জেতার ক্ষত বুকে থেকে গেল বাংলার।
Season | Result |
1936-37 | Runners’ Up |
1938-39 | Winners |
1943-44 | Runners’ Up |
1952-53 | Runners’ Up |
1955-56 | Runners’ Up |
1958-59 | Runners’ Up |
1968-69 | Runners’ Up |
1971-72 | Runners’ Up |
1988-89 | Runners’ Up |
1989-90 | Winners |
1993-94 | Runners’ Up |
2005-06 | Runners’ Up |
2006-07 | Runners’ Up |
2019-20 | Runners’ Up |
রঞ্জি ফাইনালে বাংলা (Bengal Ranji Trophy Finals)
১৯৩৬-৩৭ সালে প্রথমবার রঞ্জির ফাইনালে উঠেছিল বাংলা। কিন্তু নয়ানগর টিমের ভীনু মাকড়, অমর সিংহদের কাছে হেরে যান কার্তিক বসু, গ্রাহাম স্কিনাররা। অমর সিংহের দুই ইনিংসে শতক ও অর্ধশতক আর মুবারক আলির হ্যাট্রিক পারফরম্যান্সের কাছে হার মানতে হয় বাংলাকে।
এরপর প্রথমবার বাংলা রঞ্জির স্বাদ পায় ১৯৩৮-৩৯ সালে। ইডেন গার্ডেনসে টম লংফিল্ডের নেতৃত্বে প্রথম ইনিংসে কার্তিক বোসের ৪৮ রানের ইনিংস, আমির ইলাহির ৭৩ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া এবং দ্বিতীয় বাসিল ম্যালকমের অপ্রতিরোধ্য ৯১ রানের ইনিংস ও মুরাওয়াত হোসেনের ৪ উইকেটের দৌলতে বাংলা ১৭৮ রানে জয় পেয়েছিল। দক্ষিণ পঞ্জাব সেবার দাঁড়াতেই পারেনি বাংলার সামনে।
১৯৪৩-৪৪ সালে ফের অসাধারণ খেলে রঞ্জির ফাইনালে উঠলেও পশ্চিমাঞ্চলের কাছে হারতে হয় বাংলাকে। সেই রানার্স হওয়ার পুনরাবৃত্তি হয় ১৯৫২-৫৩ এবং ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৮-৫৯ সালে।
১৯৬৮-৬৯ সালেও বম্বের কাছে ফাইনালে পরাজিত হয় বাংলা। প্রথম ইনিংসে অশোক চ্যাটার্জির ৬৮ রানের ইনিংস, শান্তিলাল গান্ধীর ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে নির্মল চ্যাটার্জির ৭১ রান কাজে আসেনি।
১৯৭০-৭১ সালে বাংলার সামনে সেই বম্বেই ছিল। আবার হার হয়। এরপর দীর্ঘ আঠারো বছর পর রঞ্জির ফাইনালে ওঠে বাংলা। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবে দিল্লির সামনে। দীর্ঘ বিরতির পর ‘৯৩-‘৯৪ সালে অরুণ লাল ও উৎপল চ্যাটার্জিদের হাত ধরে ট্রফি ঘরে আনে বাংলা। তারপর ২০০৫-০৬, ২০০৭-০৮, দু’বার সেই ফাইনালের ফাঁড়া কাটাতে পারেনি বাংলা। শুক্রবার রাজকোটের পিচে সেই ইতিহাসই অটুট থেকে গেল।
Comments are closed.