এবার জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করছে রাজ্য! ‘এমএলএ’র কথা শোনার দরকার নেই, সরকারি নির্দেশ মানুন,’ আধিকারিকদের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

করোনা অতিমারির মোকাবিলায় এবার জেলায়-জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করছে রাজ্য সরকার। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শোনেন তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। দেন বিভিন্ন পরামর্শ। বলেন, আরও ভেন্টিলেটর কেনা হচ্ছে। মোবাইল ভেন্টিলেটরের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য।
বৈঠকে জেলা ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, করোনার চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা সর্বত্র হয়েছে কিনা। কিছু জেলায় সরকারি হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা হলেও সব জায়গায় তা না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই তিনি জানান, বেসরকারি হাসপাতালে পৃথকভাবে করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়তে হবে। নাম জানতে চান বিভিন্ন জেলার বেসরকারি হাসপাতালের। কোন কোন বেসরকারি হাসপাতাল ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে তা মমতা ব্যানার্জিকে জানান জেলা শাসকরা। তার মধ্যে কয়েকটি জায়গা নিয়ে আপত্তি করেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্লকে ব্লকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার তৈরিরও নির্দেশ দেন।
সোমবার সন্ধের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণের রিক্যুইজিশন ফর্ম সব জেলায় পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এটাও পরিষ্কার করে দেন, শুধুমাত্র হাসপাতাল বিল্ডিং নয়, সমস্ত পরিকাঠামো এবং কর্মী বাহিনীকেও রাজ্য সরকার নিয়ে নেবে। সরকারি তত্ত্বাবধানে করোনা মোকাবিলা করবেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, করোনা মোকাবিলায় যাঁরা লড়াই করছেন তাঁদের দেওয়া বিমার অঙ্ক ৫ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
মেদিনীপুরে আয়ুষ হাসপাতালে এক দিনের মধ্যে করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করতে নির্দেশ দেন মমতা। রাজ্য সরকারের তরফে ভেন্টিলেশন এবং অক্সিজেন পাঠানো হবে, জানান মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য মেদিনীপুরকে বিশেষ সহায়তা করা হবে।
পাশাপাশি রাজ্যে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে, তা দেখতে জেলা শাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি আইসিডিএস কর্মী ও আশা কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওঁদের পরিবারের কেউ বিপদে পড়লে রাজ্য প্রশাসন পাশে থাকবে।
পাশাপাশি সীমান্ত সংলগ্ন জেলার পুলিশ প্রশাসনকেও সতর্ক করে দেন তিনি। দুই সিনিয়র আইপিএস অফিসার অজয় কুমার ও অজয় নন্দাকে উত্তরবঙ্গে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ প্রশাসনকে মানবিক হওয়ার কথাও এদিন আরও একবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আলিপুরদুয়ারে ভার্মা নামে কোনও পুলিশ আধিকারিকের নাম করে তিনি প্রশ্ন করেন পুলিশ সুপারকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই অফিসার অতিরিক্ত রাফ অ্যান্ড টাফ। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলুন। মমতার কথায়, কড়াকড়ি নয়, এটা বাড়াবাড়ি।
এই জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এমপি-এমএলএ, কারও কথা শোনার দরকার নেই। সরকার যে আইন লাগু করেছে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ২ সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে।
এদিন বৈঠকের শুরুতেই ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আপনাদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা দেখাই প্রশাসনের কাজ।

Comments are closed.