করোনা পরিস্থিতিতে ঋণের মাসিক কিস্তির সুদ কি মকুব করবে কেন্দ্রীয় সরকার? না কি এই পরিস্থিতিতে সুদের অর্থ দিতে হবে? এই বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রসঙ্গেই বুধবার সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে কেন্দ্র। কেন্দ্রের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বার্তা,’ আপনারাই দেশজুড়ে লকডাউন করেছিলেন, এবার মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার দায়িত্বও নিন।’
যাঁরা ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের জন্য করোনাভাইরাস ও তার জেরে লকডাউনের সময়ে মোরাটোরিয়াম স্কিম ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। প্রথমে ৩ মাস ও পরে আরও ৩ মাস ইএমআই মোরাটোরিয়াম বা ঋণ পরিশোধ আপাতত স্থগিত রাখার জন্য ঋণগ্রহীতাকে আইনি অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ এই মোরাটোরিয়াম স্কিম নিয়েই এবার সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কেন্দ্র৷ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পিছনে লুকোবেন না৷ নিজেদের অবস্থান ঠিক করুন৷’
মোরাটোরিয়াম স্কিমে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, যাঁরা মোরাটোরিয়াম নেবেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট মাসগুলির ইএমআই-এর টাকা পরে সুদ সহ শোধ করতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে। সরকার যদি একে লকডাউনে সাধারণ মানুষকে রিলিফ হিসেবেই গণ্য করে, তা হলে ওই ইএমআইয়ের টাকা সুদ সহ পরে শোধ করতে হবে কেন? এই প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়৷
সেই মামলার শুনানিতে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের মন্তব্য, আপনারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুন৷ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখার সময় এটা নয়, জনগণের স্বার্থ দেখার সময়৷ আপনারা একটা নির্দিষ্ট অবস্থান নিন৷
কেন্দ্র সওয়াল করে, সুদ মকুব করলে অর্থনীতি, ব্যবসা, ব্যাঙ্ক ধাক্কা খাবে। তখন সুপ্রিম কোর্ট তিরস্কার করে বলে, ‘এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, কারণ গোটা দেশে আপনারা লকডাউন করে রেখেছিলেন।’ কেন্দ্রকে শীর্ষ আদালত বলে, আপনারা কিছু বলতে পারেন না৷ বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় পদক্ষেপ করা আপনাদের দায়িত্ব৷ সেই আইনেই ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনাদের হাতে রয়েছে৷ আপনার শুধু আরবিআই-এর উপর নির্ভর করে থাকতে পারেন না৷
বুধবার কেন্দ্রের হয়ে আদালতে সওয়াল করলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। ঋণের মোরাটোরিয়ামের বিষয়টি নিয়ে সরকার এখনও কেন হলফনামা দাখিল করেনি জানতে চায় সর্বোচ্চ আদালত। এই প্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল আদালতের কাছে হলফনামা দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নেন।
এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৬ মাসের জন্য মোরাটোরিয়ামের ঘোষণা করেছিল। ৩১ অগস্ট তা শেষ হবে। মামলাকারীর পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, যেহেতু মোরাটোরিয়াম নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যেন এর সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। এ প্রসঙ্গে আরবিআই দেশের আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাও তুলে ধরেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘এখানে দুটি ইস্যু রয়েছে৷ প্রথমত, মোরাটোরিয়াম নিলে কোনও সুদ চাপানো হচ্ছে কি? দ্বিতীয়ত, মোরাটোরিয়াম পিরিয়ডে কোনও সুদ চাপানো উচিত কি না৷’ এ বিষয়ে কেন্দ্রের স্পষ্ট অবস্থান দাবি করেছে সুপ্রিম কোর্ট, আরবিআই-এর নয়৷
Comments are closed.