বুধবার রাতে Citizens United (নিজেদের মতে নিজেদের গান), ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি মিউজিক ভিডিও পোস্ট করা হয়। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা রঙে জ্বলজ্বল করছে দুটি লাইন, ‘আমাদের দেশ ভারতবর্ষ বৈচিত্র ও ভালবাসার দেশ। মিলে মিশে থাকার দেশ। সেখানে মিথ্যে ও ঘৃণার চাষ বাড়লে কথা বলতে হবে বৈকি’।
তারপরেই স্ক্রিনে ফুটে ওঠে সুকুমার রায়ের একুশে আইন কবিতার লাইন, ‘শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে’।
নবান্ন দখল করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। ইশতেহারে গেরুয়া শিবির দাবি করছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সিএএ কার্যকর করা হবে। আর ভোটের বাজারে সিএএর বিরোধিতা করে মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ করলেন টালিগঞ্জের কয়েকজন অভিনেতা, নাট্যকার এবং গায়ক। পোশাকি নাম, ‘নিজেদের মতে নিজেদের গান’। মূল বক্তব্য, আমি অন্য কোথাও যাব না, আমি ভারতবর্ষে থাকব।
অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের লেখা গানে লিপ মেলাতে দেখা গেল, সব্যসাচী চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, শান্তিলাল মুখার্জি, পরমব্রত চ্যাটার্জিদের। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মত বর্ষীয়ান নাট্যকারকেও দেখা যাচ্ছে মিউজিক ভিডিওতে।
বিজেপি, আরএসএসের বিরোধিতা করে তৈরি এই গান সিএএর পাশাপাশি অন্যান্য ইস্যু নিয়ে সোচ্চার। অভিনেতাদের পাশাপাশি ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে গায়ক রূপঙ্কর, অনুপম রায়, অনিন্দ্য চ্যাটার্জিকে। গানের প্রতিটি লাইনেই উঠে এসেছে কেন্দ্রের শাসক দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা।
কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক সিন্ধান্তের বিরোধিতা করে গানের কথায় উঠে এসেছে, ‘তুমি গরিবের ভালো চাও না, তোমার ভক্তিতে দাগ রক্তের / শিক্ষাকে তুমি লাঠিপেটা করেছো, তুমি সবরকম অঙ্ক পাকিস্থান দিয়ে গুন্ করেছ। যথেষ্ট বুঝি কিসে ভালো হবে, নিজের মতোই ভাববো / আমি অন্য কোথাও যাব না, আমি ভারতবর্ষে থাকব’।
গানের কথার মতোই প্রখর বুদ্ধির ছাপ দৃশ্যায়নেও। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঋদ্ধির হাতে খাজুরাহ নিয়ে লেখা বই। কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ায় সংবিধানের বই কিনছেন ঋতব্রত। ঋতুমতী এক নারীকে নিয়ে মন্দিরে উঠছেন সুরঞ্জনা। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীও দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। ভিডিওটির মাঝে মাঝে কয়েকটি পেপার কাটিং, যাতে উঠে এসেছে নিম্নমুখী জিডিপি থেকে উত্তরপ্রদেশে লাগাতার ধর্ষণের ঘটনা। বুদ্ধিদীপ্ত, শৈল্পিক এই প্রতিবাদের ধরণ ইতিমধ্যেই নেট নাগরিকদের নজর কেড়েছে।
সাম্প্রতিককালে দেখা গিয়েছে যাঁরা কেন্দ্রের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের অনেককেই বিজেপি নেতারা দেশদ্রোহী, পাকিস্তান চলে যাও, বা টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের সদস্য বলে কটাক্ষ করেছেন। মিউজিক ভিডিওটিতে নির্মাতার এই কটাক্ষেরও জবাব দিয়েছেন নিজেদের মত করে। দেশদ্রোহী, টুকরে টুকরে গ্যাং প্রভৃতি লেখা কাগজগুলি ছিঁড়ছেন পরমব্রতরা।
বিজেপি বিরোধী হলেও ভিডিওটিতে কোনও তৃণমূল সমর্থক অভিনেতাকে দেখা যায়নি। যদিও সব্যসাচী চক্রবর্তী বা রাহুল ব্যানার্জির মত প্রকাশ্যে সিপিএম সর্মথক অভিনেতারা রয়েছেন এই মিউজিক ভিডিওতে।
Comments are closed.