নন্দীগ্রামে তৃণমূলের এজেন্ট নিয়ে সমস্যার সময় থেকেই মমতা ব্যানার্জি বলছিলেন, পুরুষরা ভয় পেলে মা-বোনেদের এজেন্ট করে দাও।
সেই মতো তৃতীয় দফায় মমতার দলের হয়ে দাপটের সঙ্গে বুথ আগলালেন প্রমীলারা। হুগলির পুড়শুড়া কেন্দ্রের দাপোরচক গ্রামে গৃহকর্মী চম্পা মান্না ভোটকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৬ ঘন্টা কাজ করলেন। পরে তাঁর বদলি হিসেবে আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ছায়া মালি। অন্যদিকে আরামবাগের পারুল বেসিক হাইস্কুলের বুথ আগলালেন কন্যাশ্রী প্রিয়াঙ্কা দাস।
মঙ্গলবার ভোটের দিন সক্কাল সক্কাল পুড়শুড়া কেন্দ্রের দাপরচক গ্রামের একটি বুথে এজেন্ট হতে গিয়েছিলেন পিন্টু মান্না। কিন্তু অভিযোগ, নথিতে গোলমালের কথা বলে তাঁকে বুথেই ঢুকতে দেয়নি বিজেপি।
মাথায় হাত পিন্টুর। সেই সময় মুশকিল আসান হয়ে এগিয়ে আসেন বছর ৪০ এর চম্পা মান্না। স্বামীকে বাড়ি ফিরতে বলে নিজেই ঢুকে যান বুথে। কাগজপত্র দেখিয়ে, সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করে বসলেন কাজে। সেই থেকে স্বামীর হয়ে বুথ আগলালেন চম্পা। এদিকে বাড়ির বউ বুথে থাকলে সংসার চলবে কী করে? অগত্যা বদলি আসে চম্পার। ঘটনাচক্রে তিনিও মহিলা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ছায়া মালি।
কী করে সামলালেন এজেন্টের দায়িত্ব?
টানা ৬ ঘণ্টা বুথ সামলে বেরিয়ে এসে লাজুক মুখে চম্পা জানালেন, পরিবারে রাজনীতি নতুন কিছু না। অবসর সময়ে স্বামী এজেন্টের কাজ শিখিয়েছিলেন। সেটাই আজ কাজে লেগে গেল। চম্পা বলেন, স্বামীকে বিজেপি যখন বের করে দিল তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমিই বসব। দিদিকে ভালবাসি, তাই বুথ ফাঁকা রাখব কী করে? ওরা জানে না, আমাদের ভয় পাওয়ানো শক্ত।
সংসার সামলাতে চম্পা মাঝপথে বাড়ি ফিরলেও আরামবাগের প্রিয়াঙ্কা বাড়ি ফিরলেন একেবারে বাক্স বন্দির পর। আরামবাগের পারুল বেসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি বুথে তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট হিসাবে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা দাস। বছর ২৪ এর প্রিয়াঙ্কা একজন কন্যাশ্রী। সেই প্রিয়াঙ্কার উপরই এবার ভরসা রেখেছিল তৃণমূল। প্রিয়াঙ্কা সেই দায়িত্ব তো সামলালেনই পাশাপাশি বার্তা দিলেন, তাঁরা কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই বরং এগিয়েই। কিন্তু পুরুষশাসিত ভোট কেন্দ্রে কোনও সমস্যা হয়নি?
প্রিয়াঙ্কার মুখে আলতো হাসি খেলে যায়। মাঝে মাঝে রিফ্রেশ হতে বাইরে আসছিলাম। তখন বিজেপির লোকজন আমাকে কটূক্তি করছিল। আমি সবই দেখেছি কিন্তু পাত্তা দেইনি।
এছাড়াও গোঘাটের পানমানি হেমব্রম ও রসুলাল হেমব্রম নামে দুই পোলিং এজেন্টকে বুথে বসতেই দেয়নি বিজেপি বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের প্রার্থী মানস মজুমদারের হস্তক্ষেপে আধ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ফের কাজে বসানো হয়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, চম্পা, প্রিয়াঙ্কার মতো ৩০ জন মহিলা এবারই প্রথম এজেন্টের কাজে বসলেন। পরের দফাগুলোর জন্য তৃণমূলের ক্যাম্পে মহিলা এজেন্টদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
Comments are closed.