নারদ শুনানি নিয়ে অসন্তোষ! হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে চিঠি আরেক বিচারপতির

শুক্রবার সকালে নারদ কাণ্ডে রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা হাইকোর্টে অন্তবর্তী জামিন পেয়েছেন। আর সেইদিনই নারদ মামলার শুনানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলকে বিচারপতি অরিন্দম সিনহার চিঠি প্রকাশ্যে চলে এলো।

বিচারপতি সিনহার চিঠির মূল নির্যাস, নারদ মামলার শুনানি যেভাবে হয়েছে, তাতে বিচারপতিরা পরিহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছেন।

প্রধান বিচারপতিকে আরেক বিচারপতির লেখা চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই ফের নারদ মামলা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে।

দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক, এক প্রাক্তন মেয়রকে গ্রেফতারির পরে ওই দিনই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত চার নেতার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। সিবিআই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাতেই কলকাতা হাইকোর্টে যায় এবং হাইকোর্ট ধৃতদের জামিনে স্থগিতাদেশ দেয়।

হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিনহা। চিঠিতে তিনি লেখেন, মামলা স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ার মধ্যে হাই কোর্ট নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কীভাবে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থাগিতাদেশ জারি করল?

নারদ মামলা ভিনরাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে লিখিত হলফনামা দায়ের করে সিবিআই।
আর এই প্রক্রিয়াতে ত্রুটি রয়েছে বলে চিঠিতে লেখেন বিচারপতি সিনহা। চিঠিতে তাঁর বিস্ফোরক দাবি, আদালতের আচরণ কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহ্যের অনুসারী নয়। পরিহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছি আমরা!

গ্রেফতারির দিন রাতে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা ইমেল মারফত হাই কোর্টের কাছে পেনাল কোডের ৪০৭ নম্বর ধারা উল্লেখ করে নারদ মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান। চিঠিতে বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, ২২৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী শুধুমাত্র সিঙ্গল বেঞ্চের কাছেই কোনও দিওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা স্থানান্তরের দাবি জানানো যায়। তা সত্ত্বেও ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে।

তাঁর প্রশ্ন, হতে পারে বাইরে বিশৃঙ্খলার জন্য সিবিআই এভাবে আবেদন করেছে, কিন্তু কোনও ডিভিশন বেঞ্চ কী করে রিট পিটিশন বা লিখিত হলফনামা গ্রহণ করতে পারে?

ধৃতদের জামিন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির মতানৈক্যের জেরে মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি নিয়েও তাঁর চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিনহা। তিনি লেখেন, কোনও ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিদের মতের অমিল হলে তৃতীয় বিচারপতির মতামত নেওয়া হয়ে থাকে। নারদ মামলায় তা করা হয়নি। সরাসরি পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা পাঠানো হয়েছে। অরিন্দম সিনহা ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, যখন দুটি ডিভিশন বেঞ্চের মতভেদ তৈরী হয় তখন সেই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হয়।

বিচারপতির চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর কলকাতা হাই কোর্টে চলা নারদ মামলার তাৎপর্য আরও ঘনীভূত হল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একটি অংশ।

Comments are closed.