নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন রয়েছে এমন সংস্থায় সম্প্রতি তল্লাশি কলকাতা পুলিশের, সেই কারণেই কি সিবিআই-এর এই তৎপরতা? প্রশ্ন
এম নাগেশ্বর রাও। সিবিআই-এর সদ্য প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান, যাঁর নির্দেশে রবিবার সন্ধ্যায় সিবিআই-এর তদন্তকারী দল কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরা করতে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল, সেই নাগেশ্বর রাওয়ের সঙ্গে একটি বেসরকারি সংস্থার যোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, এই সংস্থাটির কলকাতার অফিসে সম্প্রতি হানা দেয় কলকাতা পুলিশ।
জানা গেছে, বেসরকারি ওই সংস্থা, যার অফিস কলকাতায়, তার সঙ্গে অর্থনৈতিক একাধিক লেনদেন হয়েছে নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী ও মেয়ের।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শুধুমাত্র ওই সংস্থার দফতরে হানা দেওয়াই নয়, সেখান থেকে এমন কিছু তথ্যও উদ্ধার করেছেন কলকাতা অফিসাররা, যা নিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানাকে কেন্দ্র করে রাজ্য বনাম সিবিআই-এর মধ্যে নজিরবিহীন সংঘাত তৈরি হয়েছে, যার জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ধরনায় বসেন। এই অবস্থায় thebengalstory.com এর হাতে আসা এই তথ্য গোটা ঘটনাকে নয়া মোড় দিতে পারে।
কলকাতা পুলিশের কিছু অফিসার, যাঁরা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে জড়িত তাঁরা মনে করছেন, পুলিশের এই হানা ও তদন্ত সিবিআই-এর এই হঠাৎ তৎপরতার অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে পুলিশেরই একাংশ বলছেন, দুই ঘটনার মধ্যে কোনও মিল নেই।
জানা গেছে, বউবাজার থানায় নথিভুক্ত একটি কেসের তদন্তে সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ হানা দেয় Angela Mercantiles Private Ltd (AMPL) নামে ওই সংস্থার দফতরে।
AMPL হল একটি নন ব্যাঙ্কিং ফিন্যান্স কোম্পানি, যাদের দফতর ৫ ক্লাইভ রো’তে। ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অফিস ছিল সল্টলেক সেক্টর ১ এর সিএ ব্লকে। ১৯৯৪ এর ফেব্রুয়ারিতে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা হয়।
এর আগে একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন মারফত জানা গিয়েছিল, রেজিস্টার অফ কোম্পানিজ এর তথ্য অনুযায়ী AMPL এবং নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এম সন্ধ্যার মধ্যে বেশ কিছু আর্থিক লেনদেন হয়েছে। ২০১১ এর মার্চ মাসে নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী সন্ধ্যা এই সংস্থা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নেন। এছাড়াও ২০১২ অর্থবর্ষের শেষ থেকে ২০১৪ র মধ্যে তিন দফায় এম সন্ধ্যা ১.১৪ কোটি টাকার লোন দেন AMPL কে। ২০১২ সালে দেওয়া হয় ৩৫.৫৬ লক্ষ টাকা এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেওয়া হয় ৪০.২৯ লক্ষ টাকা করে।
রাও অবশ্য এর আগে তাঁর স্ত্রীর এই আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সাফাই দিয়ে এতে কিছু বেনিয়ম হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন।
কিন্তু কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তারা এই সংস্থার দফতরে হানা দিয়ে এমন কিছু তথ্য পেয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে রাওয়ের কন্যা ওই সংস্থার থেকে বেতন বাবদ প্রচুর অর্থ পেয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ওই সংস্থটি নাগেশ্বর রাওয়ের কন্যাকে বেতন বাবদ ২০১৩-১৪ এবং ২০১৫-১৬ সালে ১৪ লক্ষ টাকা দেয়। আরও চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, ২০১৪ সালের নির্দিষ্ট একটি দিনেই সারা বছরের মাইনে বাবদ তাঁকে সংস্থাটি ৪.৫ লক্ষ টাকা দেয়।
২০১৩ সালে আইনের স্নাতক পাশ করেন রাওয়ের কন্যা। এর পর তিন বছর ধরে প্রতি মাসে বেতন বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে পান তিনি। ওই তিন বছরে মাইনে বাবদ তাঁকে দেওয়া হয় ১৪.১ লক্ষ টাকা। কিন্তু তিনি কোন পদে ওই সংস্থার হয়ে কর্মরত ছিলেন সেই বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
আরও জানা গেছে, অন্য দুটি সংস্থা, যার মধ্যে হায়দরাবাদের একটি বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল সিবিআই। তাদের থেকেও বেতন বাবদ ৭.৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন এম নাগেশ্বর রাওয়ের কন্যা।
এছাড়াও কলকাতা পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, বি প্রভাকরণের (বালাসুব্রমনিয়ান প্রভাকরণ) সংস্থা বি এস মাইনিং কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড এর সঙ্গেও AMPL এর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ওড়িশায় কয়লা ও আয়রন খনির উত্তোলনে বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই সংস্থার নাম জড়িয়েছে।
thebengalstory.com বিষয়টি নিয়ে AMPL এর ডিরেক্টর প্রবীণ আগরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এম নাগেশ্বর রাওয়ের দিল্লির অফিসেও আমরা ফোনে যোগাযোগ করি দু’বার। প্রথমবার বলা হয়, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন, দ্বিতীয়বার বলা হয় তিনি অফিস থেকে চলে গিয়েছেন।
কলকাতার এমন একটি সংস্থা থেকে নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এবং মেয়ে কেন টাকা পাচ্ছিলেন কলকাতা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছিল।
২০১৮ এর অক্টোবরে সিবিআই-এর তৎকালীন প্রধান অলোক ভার্মাকে কেন্দ্র ছুটিতে পাঠানোর পর সংস্থার অন্তর্বর্তীকলীন প্রধান পদে আনা হয় ওড়িশা ক্যাডারের আইপিএস এম নাগেশ্বর রাওকে। ৩ রা ফেব্রুয়ারিই ছিল সিবিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে তাঁর শেষ দিন। সেদিনই কেন সিবিআই অতি তৎপর হয়ে রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর সঙ্গে কি এই সংস্থার সঙ্গে নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এবং মেয়ের আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক নিয়ে কলকাতা পুলিশ যে তদন্ত করছে তার কোনও সম্পর্ক আছে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
সোমবারই নয়া সিবিআই ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঋষি কুমার শুক্ল।
Comments are closed.