রাজ্যে সঙ্ঘের শাখা বৃদ্ধির গতি এবং স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আরএসএস, মে মাসে পাঁচটি শিবিরের আয়োজন।
সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে রাজ্যে তৃণমূলের শাসনে দ্রুত হারে বাড়ছে আরএসএস। গত ছয় বছরে পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির হার, গোটা দেশে সমস্ত রাজ্যে সঙ্ঘের শাখা বৃদ্ধির হারকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত ছ’ বছরে সঙ্ঘের শাখার বৃদ্ধির হার ৭০ শতাংশের বেশি। অথচ, এই সাফল্য সত্ত্বেও কপালে চিন্তার ভাঁজ সঙ্ঘ কর্তাদের।
কারণ, গত এক বছরে শাখার সংখ্যা বৃদ্ধির গতি খানিকটা হলেও থমকেছে। আরএসএস সূত্রে দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৩ সালে যেখানে আরএসএসের ৭৫০ টি শাখা ছিল, সেখানে ২০১৮-তে সেই শাখার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৭৯। সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল ২০১১ থেকে ২০১৮ র মধ্যে। অথচ, গত এক বছরে বেড়েছে মাত্র ১৬৯টি।
কেন শাখা বৃদ্ধির হার গত এক বছরে কমেছে তা নিয়েই এখন চর্চা করছেন সঙ্ঘের রাজ্য নেতৃত্ব। একাংশের বক্তব্য, শাসক আর প্রশাসনের রক্তচক্ষু জন্য গুটিয়ে যাচ্ছেন বহু উৎসাহী ব্যক্তি। অভিযোগ, গত এক বছরে সরকার-প্রশাসন এবং শাসকদল সঙ্ঘের বিভিন্ন কাজকর্মে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্ত ঝুট-ঝামেলা এড়াতে অনেকে সঙ্ঘের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। ওই ধরনের লোকজনকে ফের সাহস জোগানোর কৌশল খুঁজছে সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
একাংশ আবার মনে করছেন, রাজ্যে অন্য একটি হিন্দু সংগঠনের বাড়বাড়ন্তে ভাটা পড়েছে সঙ্ঘের কাজকর্মে নথিভুক্ত করানো তরুণ-তরুণীদের সংখ্যায়। তাঁদের অভিমত, যেহেতু সঙ্ঘ শৃঙখলায় অনেক বেশি জোর দেয় তাই উগ্র ধর্মান্ধতা সুড়সুড়ি দিয়ে সঙ্ঘ শিবির ভাঙছে ওই সংগঠন। এই জোড়া কারণে সঙ্ঘের প্রতি আকর্ষণ কিছুটা ফিকে হয়েছে। এটা রাজ্যের শাসকদলের জন্যই হচ্ছে।
এছাড়াও রাজ্য সঙ্ঘ নেতৃত্বের আরও একটা চিন্তার বিষয়, এ রাজ্যে সঙ্ঘের ভাবধারায় গঠিত বিদ্যা ভারতী অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংস্থান দ্বারা পরিচালিত তিনশোর কিছু বেশি স্কুলের ভবিষ্যৎ। বিবেকানন্দ বিদ্যা বিকাশ পরিষদ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই স্কুলগুলি পরিচালনা করে। ৩১৫টি স্কুলে পড়াশোনো করে ৬৫ হাজারের মতো পড়ুয়া।
ইতিমধ্যেই এ রকম ১২৫টি স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। সঙ্ঘ নেতৃত্ব আইনি পথে এর মোকাবিলা করা শুরু করেছেন। আইনি লড়াই আরও জোরদার করতে প্রস্তুতির নিচ্ছেন স্কুলের সঙ্গে যুক্ত কার্যকর্তারাও। সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গের মুখপাত্র বিপ্লব রায় বলেন, ‘এর আগে রায়গঞ্জের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অনুমতি পেতে ২৫ বছর আইনি লড়াই করতে হয়েছে। এটা নতুন নয়।’
পাশাপাশি, এই সমস্ত স্কুল নিয়ে যে প্রচার আছে তা মোকাবিলা করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ‘এই শিক্ষা সংগঠনকে ওড়িশা সরকার প্রশংসা করেছে। পঠনপাঠন সাম্প্রদায়িক হলে বিরোধী রাজ্য কি স্বীকৃতি দিত?’
বিপ্লব রায়ের অভিযোগ, ‘গত কয়েক বছরে সারা রাজ্যে দেশ বিরোধী অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপুল সংখ্যায় বেড়েছে। সে দিকে সরকারের নজর নেই।
আরএসএসের পক্ষে প্রান্ত কার্যবাহ জিষ্ণু বসুর দাবি, গোটা দেশে গত বছর সংগঠন বৃদ্ধির হার যেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন বৃদ্ধির হার প্রায় ৭০.৪০ শতাংশ। যুবকদের আরএসএসে যোগদান মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সংগঠনের পাশাপাশি দেশকে শক্তি যোগাবে বলেই মনে করছেন তিনি। তবে শাখা বৃদ্ধির গতি থমকে যাওয়া এবং স্কুলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও, সঙ্ঘ নেতৃত্ব আশাবাদী। আগামী মে মাসেই রাজ্যের পাঁচটি কেন্দ্রে গ্রীষ্মের দ্বিতীয় বর্ষের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে কম করে হাজার দুয়েক যুবক যোগ দেবেন। দু’বছর পর এ’রাজ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শিবিরের আয়োজন হচ্ছে।