এই দেবীর বিসর্জন না হলে অন্য কোনও প্রতিমাকে ভাসান দেওয়া হয়না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় উদাহরণ বুড়িমার পুজো
জাগ্রত বলে পরিচিত এই পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন না হলে অন্য কোনও প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ নেই দত্তপুকুরে
বাংলার অন্যতম প্রাচীন পুজো উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুরের শিবালয়ের বুড়িমার পুজো। জাগ্রত বলে পরিচিত এই পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন না হলে অন্য কোনও প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ নেই দত্তপুকুরে। পুজোর সময় দন্ডি কেটে মনের কথা মাকে জানান শতাধিক মানুষ। বুড়িমার দেবী খুব জাগ্রত এই ভাবনা থেকেই দন্ডিকাটার প্রথা চলছে বহু বছর ধরে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বড় উদাহরণ বুড়িমার পুজো। আজও এলাকার সংখ্যালঘুরা পুজোর সময় আসেন এখানে। কথিত আছে, রহমত আলী নামে এক অসুস্থ ব্যক্তি দেবীকে দেখতে পেয়েছিলেন। তাই সুস্থ হয়ে পরবর্তীকালে তিনি এই পুজো করেন। রহমত আলী আজ না থাকলেও বিসর্জনের আগে শোভাযাত্রা তাঁর বাড়ির সামনে থেমে যায়। কিন্তু কীভাবে এই পুজোর উৎপত্তি?
উত্তর ২৪ পরগনার বহু বছর আগে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পুত্র রাজা শিবচন্দ্র রায় নদীপথে দেশভ্রমণে বের হন। সুবর্ণবতী বা সূক্ষ্মবতী নদী (এখন শুঁটি নদী) দিয়ে যাওয়ার সময় রাজার তরী দুর্যোগের কবলে পড়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এক দুর্গম স্থানে তাঁর নৌকা থামে। দুর্যোগের রাত তিনি নদী তীরবর্তী ওই জায়গাতেই কাটান। সেই রাতেই তিনি স্বপ্নে দর্শন পান নৃসিংহের আদলে মা দুর্গার। দেবী তাঁকে আদেশ দিয়ে বলেন এখানেই তাঁর পুজো করতে। স্বপ্নে যে রূপ দেবীর দর্শন করেছিলেন পর্ণ কুটির বানিয়ে রাজা শিবচন্দ্র সেখানেই শুরু করেন দুর্গাপুজো। কিছুদিন থাকার পর রাজা শিবচন্দ্রকে ঘিরে সেখানেই গড়ে ওঠে জনপদ। রাজা শিবচন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করা পুজো বুড়িমার পুজো নামে পরিচিত। আজও নিজেদের রাজা শিবচন্দ্রের বংশধর দাবী করে শিবালয়ের রায় পরিবার নিষ্ঠা ভরে আয়োজন করে চলেছে দুর্গাপুজোর। বারাসাত থেকে চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমডাঙ্গার দিকে একটু এগোলেই সন্তোষপুরের মোড়। জাতীয় সড়ক থেকে ডান দিকে দত্তপুকুরের দিকে এগিয়ে দু-কিলোমিটার গেলেই রাস্তার ওপরেই দেখা যাবে বুড়িমার মন্দির।
কথিত আছে দেবীকে নৃসিংহ রূপে স্বপ্নে দেখেছিলেন মহারাজা শিবচন্দ্র রায়। তাই নৃসিংহ রূপেই এখনও পুজো করা হয় দেবীকে। আগে ছাগবলি হত। কিন্তু এখন তা বন্ধ হয়ে পশু বলি বন্ধ হয়েছে। আজও জন্মাষ্টমীর পরে দেবী কাঠামো গড়ে প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয়।
বুড়িমার পুজো দেখতে দূর দুরান্ত বহু মানুষ ভিড় জমান। গত দু বছর করোনার কারণে দুর্গাপুজোর সময়েও প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল কিছু নিয়মাবলী। এবার আবার পুরোনো ছন্দে ফিরবে পুজো,আশাবাদী রায় পরিবার।
Comments are closed.