এবিপি আনন্দ-সিএনএক্স সমীক্ষা: ৫৯% মানুষ মমতার সিএএ বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে, আইনের বিরোধিতায় ৫৩%! অস্বস্তিতে আছে কেন্দ্র, বলছে ৭১%

এই রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী। এবিপি আনন্দ এবং সিএনএক্স-এর এক যৌথ সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় রাজ্যের ৫৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা এই আইনকে সমর্থন করেন না। ৪৩ শতাংশ মানুষ নয়া আইনকে সমর্থন করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের প্রতিবাদে কলকাতা উত্তাল হওয়ার আগে গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এই সমীক্ষা করা হয়। মোট ২,১৩৪ জনের কাছে ১২ দফা প্রশ্ন রাখা হয়েছিল এই সমীক্ষায়।

এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের ৫৯ শতাংশ মানুষ সমর্থন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। ৪০ শতাংশ মানুষ মমতার এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না বলে মত দিয়েছেন। বাংলার ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এই আন্দোলনের জেরে রাজনৈতিক সুবিধা পাবে তৃণমূল সরকার। ৪৩ শতাংশ তা মনে করেন না।

স্বাভাবিকভাবেই শাসক তৃণমূল এবিপি আনন্দ এবং সিএনএক্স-এর সমীক্ষার এই ফল দেখে খুশি।
সমীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, নয়া নাগরিকত্ব আইন কি মোদী সরকারের মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ? ৪৯ শতাংশ মানুষের মত হল, হ্যাঁ, কেন্দ্রের এই আইন মুসলিম বিরোধী। ৪৭ শতাংশ মানুষের বক্তব্য, না। চার শতাংশ মানুষ কোনও মতামত দেননি। নয়া নাগরিকত্ব আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মনে করেন ৫০ শতাংশ মানুষ। ৩০ শতাংশ মানুষ জানাচ্ছেন, এই আইন সংবিধানের মূল ধারার বিরোধী নয়।
বিরোধীরা কেন্দ্রের এই নয়া আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কি না জানতে চাওয়া হলে, ৫১ শতাংশ মানুষ জানান, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এই আন্দোলন হচ্ছে না। ৪২ শতাংশ বলছেন, বিভ্রান্তি ছড়ানোর লক্ষ্যেই দেশজুড়ে এই আন্দোলন করা হচ্ছে।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যের ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্যেই এই আইন সংশোধন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০ শতাংশ মানুষ এই মতের বিরোধিতা করেছেন। বাকি ২০ শতাংশ কোনও মত দেননি। নাগরিকত্ব আইন-এনআরসি নিয়ে সমীক্ষায় আরও একটি প্রশ্ন রাখা হয়, মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব থেকে নজর ঘোরাতে কি মোদী সরকার নাগরিকপঞ্জি কিংবা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এসেছে? এতে ৬৩ শতাংশ মানুষই উত্তর দিয়েছেন, হ্যাঁ। ৩১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, না, তেমনটা নয়। ৬ শতাংশ মানুষ জবাব দেননি।
নাগরিকপঞ্জি নিয়ে কী ভাবছেন বাংলার মানুষ? তাঁরা কি চান, দেশজুড়ে এনআরসি চালু হোক? ৫৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা এনআরসি চান না। এনআরসি চেয়েছেন ৪১ শতাংশ মানুষ।
৫৯ শতাংশ মানুষ মনে করছেন দেশজোড়া আন্দোলনের জেরেই এনআরসি নিয়ে অবস্থান বদল করেছে কেন্দ্র। ২৫ শতাংশ বলছেন, ‘না’। ১৬ শতাংশ কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। পাশাপাশি, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কি অস্বস্তিতে রয়েছে মোদী সরকার? এর উত্তরে বাংলার ৭১ শতাংশ মানুষই মনে করেন, হ্যাঁ, যথেষ্ট চাপে রয়েছে কেন্দ্র।
কিন্তু আন্দোলনের নামে বাসে-ট্রেনে আগুন লাগানোর মতো হিংসাত্মক ঘটনাকে বাংলার ৬৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন করেন না। মাত্র ৯ শতাংশ এই পদ্ধতিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
সব মিলে নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি এবং এনপিআর নিয়ে রোজই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। বিশেষ করে লোকসভা ভোটে বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার পর সম্প্রতি রাজ্যে তিন বিধানসভা উপনির্বাচনের জয় তৃণমূল শিবিরকে যথেষ্টই উজ্জীবিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে এবিপি আনন্দ-সিএনএক্স সমীক্ষা রাজ্যের শাসক দলকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

 

Comments are closed.