দেশের ৩ টি বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করতে আরও অন্তত ৬ মাস সময় চাইল আদানি গ্রুপ। এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (AAI) কাছে এই মর্মে আবেদন করেছে গৌতম আদানির সংস্থা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লখনউ, ম্যাঙ্গালোর ও আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনের বরাত পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু করোনা সংক্রমণ, লকডাউন, বিমান পরিবহণে আর্থিক মন্দা সহ একাধিক কারণে অন্তত ৬ মাস অতিরিক্ত সময়ের আর্জি জানিয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা।
মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেন, এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া আরও ৬ টি বিমানবন্দরের পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের বরাত দেবে। এগুলি হল, বারাণসী, অমৃতসর, ভুবনেশ্বর, ইন্দোর, রায়পুর ও ত্রিচি বিমানবন্দর। কিন্তু আদানি গোষ্ঠী আপাতত আগের ৩ টি বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিতে অতিরিক্ত সময় চাওয়ায় সামগ্রিকভাবে বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া পিছোতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতবছরই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশের বিমানবন্দরগুলিতে যৌথ উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনের কাজ চালানো হবে। সেই হিসেবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ছটি বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করতে সর্বাধিক দর হেঁকেছিল আদানি গ্রুপ। ৬ টি বিমানবন্দরের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের বরাত পায় গুজরাতের শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা। টেন্ডারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিড করার দৌলতে আহমেদাবাদ, তিরুবনন্তপুরম, লখনউ, গুয়াহাটি, জয়পুর এবং ম্যাঙ্গালুরু বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পায় তারা। যদিও এই বেসরকারিকরণের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে কেরলের বাম সরকার। এ নিয়ে মামলাও করেছে তারা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এখনও জয়পুর, তিরুবনন্তপুরম এবং গুয়াহাটি বিমানবন্দর আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়ার অনুমোদন দেয়নি। তবে বাকি ৩ টি বিমানবন্দরের মান ও পরিকাঠামোর উন্নয়নে ৫০ বছরের লিজ পায় আদানি গোষ্ঠী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া সেই চুক্তি অনুযায়ী, ১৮০ দিনের মধ্যে বিমানবন্দরের ভার নিতে হবে বেসরকারি সংস্থাকে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অসামরিক বিমান পরিষেবা। চরম আর্থিক সঙ্কটে বিমান সংস্থাগুলো। চলছে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন সংকোচনের মতো কঠোর পদক্ষেপ। প্রায় দু’মাস দেশীয় বিমান পরিষেবা বন্ধ থাকার পর মে থেকে ফের শুরু হয় বিমান চলাচল। সংস্থাগুলোকে যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে তবেই বিমান পরিবহণের অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী আশ্বাস দিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক উড়ানেও অনুমোদন দেবে সরকার।
এদিকে আদানি গোষ্ঠীর এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এএআই বলে জানিয়েছেন এক আধিকারিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক জানান, এএআই আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথাও ভাবতে পারে। তাদের আবেদন না মেনে নতুন করে নিলামে যাওয়ার রাস্তাও খোলা এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সামনে। পাশাপাশি, আদানি গ্রুপ চুক্তির সময় পারফরমেন্স গ্যারান্টি হিসেবে বিমানন্দর প্রতি যে ১০০ কোটি টাকা করে দিয়েছিল, সেটাও তারা হারাতে পারে।
বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের কেন্দ্রের আগ্রাসী পদক্ষেপে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে বিমান পরিবহণের শোচনীয় অবস্থা। এবার কার্যত একই কারণ দেখিয়ে অতিরিক্ত সময় চাইল আদানি গোষ্ঠী। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার।
Comments are closed.