ধর্ষককে মেরে ধর্ষণ রোখা যাবে না, পুরুষদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা তসলিমা নাসরিনের

মৃত্যুদণ্ডে কি অপরাধ কমে? সম্প্রতি তেলেঙ্গানায় এক তরুণীকে ধর্ষণ এবং পুড়িয়ে খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে ফের দেশজুড়ে দাবি উঠেছে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের। সংবিধানের শপথ নেওয়া সাংসদ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের একাংশ, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে তোলপাড় দেশ।
এবার অপর্ণা সেনের পর এই বুনিয়াদি সওয়াল তুলে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নিলেন আর এক বাঙালি। তিনি তসলিমা নাসরিন।
শুক্রবার ভোররাতে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে তেলেঙ্গানা ধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুন মামলায় অভিযুক্ত ৪ অভিযুক্তের। এই ঘটনাকে তুলে ধরে পুলিশকে কৃতিত্ব দিয়ে অভিনন্দনের বন্যা। এভাবে আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে এনকাউন্টার ঠিক না ভুল, তা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু তেলেঙ্গানা এনকাউন্টারের পর কি দেশে নারীরা নিরাপদ হলেন? মৃত্যুদণ্ড কিংবা এনকাউন্টারই কি খুন-ধর্ষণের সমাধান? নাকি সমস্যাটা লুকিয়ে সমাজের গভীরে? এই বুনিয়াদি প্রশ্নই তুললেন বাঙালি সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন।
বুধবার থেকে একের পর এক ট্যুইটে লজ্জা, দ্বিখণ্ডিতর স্রষ্টা প্রশ্ন তুলেছেন পুরুষের মানসিকতা নিয়ে। শতাব্দী প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক প্রবণতা নিয়ে। প্রথম ট্যুইটে তসলিমা লেখেন, ধর্ষককে মেরে ফেলে ধর্ষণ রোখা যাবে না। মহিলারা দুর্বল এবং পুরুষের যৌন ইচ্ছা মেটানোর বস্তু মাত্র, এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে আগে শেষ করতে হবে।

এখানেই থামেননি তসলিমা। ফের ট্যুইটে তিনি লেখেন, মানুষ হিংসা ভালোবাসে। তাই যখন আপনি ধর্ষণের সমাধান হিসেবে ধর্ষককে ফাঁসি, পিটিয়ে মারা, খুন করে দেওয়া কিংবা অঙ্গচ্ছেদের নিদান দেন, মানুষ খুশি হয়। কিন্তু যেই আপনি বলবেন, নারীর অধিকার সম্পর্কে পুরুষকে শিক্ষিত করে তুলুন, নারী বিদ্বেষ কিংবা পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়ুন, মানুষের সেটা ভালো লাগবে না।

ট্যুইটে তসলিমা নাসরিন জানিয়েছেন, পুরুষের মন থেকে নারী বিদ্বেষ পুরোপুরি দূর করতে মৃত্যুদণ্ড যথেষ্ট নয়। তাহলে মৃত্যুদণ্ডের জন্য দেশজুড়ে এমন জোরালো সওয়াল কেন? পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদল না হলে, কীভাবে নারীকে যোগ্য মর্যাদা দেবে পুরুষ শাসিত সমাজ? তেলেঙ্গানায় পুলিশের এনকাউন্টার নিয়ে যখন উদ্বাহু সারা দেশ, এই আবহে তসলিমা নাসরিনের তোলা বুনিয়াদি প্রশ্নের উত্তর মেলার সম্ভাবনা কম। তবে উন্মাদনা থিতিয়ে এলে ভেবে দেখার সুযোগ হবে কি?

Comments are closed.